
ছবি: সংগৃহীত
দেশে চলমান বৃষ্টিপাত আগামী পাঁচদিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে অবিরাম বর্ষণের আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়া সহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা উপকূলীয় এলাকার জন্য বিশেষভাবে সতর্কতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গা এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণেরও পূর্বাভাস রয়েছে। রোববার থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ এলাকায় এমন পরিস্থিতি বজায় থাকবে এবং রাজশাহী ও রংপুরের বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বুধবারও রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, বর্তমানে মৌসুমি বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে, যার প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে থাকবে। তবে এরপর কয়েকদিন বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে, তারপর আবার তা বাড়তে পারে।”
তিনি আরো জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই এই এলাকার জন্য তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এসব সমুদ্রবন্দরে চলাচলকারী জাহাজগুলোর জন্য সতর্কতা বাড়িয়েছে।
তরিফুল নেওয়াজ কবির আরও জানিয়েছেন, “চট্টগ্রামে চলতি সময়ে পূর্ণিমার প্রভাবে নিম্নাঞ্চল, দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। এ কারণে স্থানীয় জনগণকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে বন্যা, নদীর পানি বৃদ্ধি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। পাশাপাশি নাগরিকদেরও পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, বিশেষ করে নদী-নালা ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের যাতে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করেন।
আবহাওয়া অফিসের এই পূর্বাভাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও কৃষি কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এই মৌসুমি বায়ু ও বৃষ্টিপাতের ধারা কৃষিজমিতে অতিরিক্ত পানি জমার সম্ভাবনা তৈরি করে, যা ফসলের ক্ষতি করতে পারে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রাফিকজ্যাম, পানি জমে দুর্ভোগ এবং নদী ভাঙনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ সতর্কতায় সবাইকে বাড়তি সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করেছে এবং বৃষ্টির সময়ে কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্রবন্দর ও নদীপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী কয়েকদিন দেশের আবহাওয়ার গতিপথ ও বৃষ্টিপাতের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত পূর্বাভাসে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ