
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য জয় মানেই সবসময়ই নতুন উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাস। এবার তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যখন কঠিন প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এমন এক রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিলেন তানভির ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। এই ১৬ রানের জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে এবং শেষ ম্যাচের জন্য লড়াইকে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ভরে দিয়েছে।
ম্যাচের গোড়ার দিকে শ্রীলঙ্কা দারুণ শুরু করেছিল। কুশল মেন্ডিস ৩১ বলে ঝড়ো ৫৬ রানের ইনিংস খেলছিলেন। তার সাথে নিশান মাদুশকা যোগ্য সঙ্গী হয়ে দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ দলের জন্য তাড়া করা ২৪০ রানের লক্ষ্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল, বিশেষত পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার মাঠ ও আবহাওয়া বিবেচনায়। প্রথম থেকেই শ্রীলঙ্কা চাপ সৃষ্টি করছিল এবং মাত্র দশ ওভারের মধ্যেই তারা ৭৫ রান তুলে নিয়েছিল।
তবে তখনই তানভির ইসলাম মাঠে এসে খেল দেখাতে শুরু করেন। তার ধারাবাহিক ও চমৎকার বোলিংয়ে প্রথমে নিশান মাদুশকা ফিরেন, এরপর গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কা তারকা কুশল মেন্ডিসও আউট হন। এরপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ছক্কা বিহীন বোলিংয়ে স্পিনাররা বিপর্যয় সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে শামীম হোসেন পাটোয়ারী ঝড়ো বোলিংয়ে ম্যাচের গতি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের দিকেই ফিরিয়ে আনেন।
মাঠের অন্ধকারেও আলো ঝলকান তানভির। ম্যাচের শেষ দিকে তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট যেমন শ্রীলঙ্কার আশা ভঙ্গ করেছে, তেমনি মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচও ম্যাচের সমাধান আনতে বড় অবদান রাখে। মোস্তাফিজ পুরো ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকার পর ম্যাচের শেষ দিকে সেই এক ক্যাচে আত্মবিশ্বাস ও জয় এনে দেন বাংলাদেশকে।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দলের শুরু ছিল ঝড়ো। তানজিদ-শান্তরা দ্রুত রান তোলার মাধ্যমে টিমকে সঠিক পথে নিয়ে যান। পারভেজ হোসেন ইমনও ৬৯ বলে ৬৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তার ব্যাট থেকে ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কা দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। এরপর তাওহীদ হৃদয় উইকেটে এসে দলের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়ান। যদিও শেষ পর্যন্ত তার রান আউট হওয়ায় দল কিছুটা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল ২৪০ রানের কঠিন লক্ষ্যকে টপকে যায়।
তানভির, শামীম, মোস্তাফিজদের বোলিং ও নেতৃত্ব ম্যাচে বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়। তাদের ধারাবাহিক বোলিং চাপ আর দলের দুর্দান্ত ফিল্ডিং শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে। পুরো ম্যাচ জুড়েই উত্তেজনা ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৬ রানে জয় লাভ করে।
এই জয়ের মাধ্যমে সিরিজের স্কোর ১-১ সমতায় পৌঁছায়, ফলে তিন ম্যাচের সিরিজের ফাইনাল লড়াই এখন পাল্লেকেলে মাঠে, শ্রীলঙ্কাতেই অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
এই রুদ্ধশ্বাস জয় শুধু স্কোরবোর্ডেই নয়, দলের আত্মবিশ্বাসের জন্যও বিশেষ টনিক। দীর্ঘ সাত মাসের অপেক্ষার পর আবারো আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর থাকবে শেষ ম্যাচে, যেখানে বাংলাদেশ আরো শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামবে।
বিশ্বমানের ক্রিকেটীয় দক্ষতা আর দলীয় একতা বাংলাদেশের এই জয়ের মূল হাতিয়ার। পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে দুই দলেরই। ক্রিকেটবিশ্বের নজর থাকবে শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ সিরিজের এই উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের প্রতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ