
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান কেবল অভিনয় দক্ষতার জন্যই নন, বরং সমাজ সচেতনতা ও পশুপ্রেম নিয়েও নিয়মিতই আলোচনায় থাকেন। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে নিজের মত প্রকাশ করে থাকেন তিনি, বিশেষ করে যখন নির্যাতন বা অবিচারের কোনো ঘটনা সামনে আসে। এবার তিনি প্রতিবাদ করলেন একটি নির্মম পশু নির্যাতনের ঘটনায়, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
বিড়ালছানার ওপর বর্বর নির্যাতন, প্রতিবেশীর ফাঁস করা লোমহর্ষক বর্ণনা
ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে। রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ইলমা নামের এক তরুণী স্কুল থেকে ফেরা ছোট ভাইয়ের মুখে একটি আতঙ্কজনক ঘটনা শোনেন। ভাই জানায়, একটি ছোট বিড়ালছানার মর্মান্তিক কান্নার শব্দ সে শুনেছে, যা বাড়ির ওপর তলা থেকে আসছিল।
ইলমা তখনই উপরের তলায় ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান, প্রতিবেশীর বাসার দরজা খোলা, আর বাড়ির গৃহকর্মী একজন সাদা রঙের ছোট বিড়ালছানাকে লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে বিড়ালটিকে রক্ষা করেন। এরপর আবিষ্কার করেন, এটি কোনো সাধারণ বিড়াল নয়—এটি তার নিজের আদরের বিড়ালছানা, যে তার ঘর থেকে নিখোঁজ ছিল কিছুক্ষণ আগে।
বিড়ালটির অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তার গায়ে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন, সে কাঁপছিল, রক্তক্ষরণ হচ্ছিল নাক দিয়ে, চলাফেরা করতে পারছিল না। ইলমা দ্রুত বিড়ালটিকে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান এবং বিষয়টি নিয়ে একটি বিস্তারিত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেন।
নির্দেশদাতা এক দম্পতি, গৃহকর্মীর হাতে মার খেয়েছে নিরীহ প্রাণী
সূত্র জানায়, এই নির্যাতনের পেছনে ছিল একজন স্বামী-স্ত্রী দম্পতির নির্দেশ। তাদের নির্দেশেই গৃহকর্মী বিড়ালটিকে আঘাত করেছে। যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে তাদের নির্মম মনোভাব ও সহানুভূতির অভাব নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
পিয়া জানালেন খবর, ভাইরাল হলো ঘটনাটি
মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া ঘটনাটি ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, এই পশু নির্যাতনের ঘটনা তাকে স্তম্ভিত করেছে। বিড়ালছানাটি মৃত্যুশয্যায় আছে, এবং যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে ধরণের মানসিকতার মানুষ, তা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা কঠিন।
পিয়ার পোস্টের সূত্র ধরে ঘটনাটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, আর এতে প্রতিক্রিয়া জানান অনেকেই, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাদিয়া আয়মান।
“ওরা মানুষ নয়, পশুর চেয়েও অধম”— ক্ষুব্ধ সাদিয়া আয়মান
ঘটনার সূত্র ধরে বিকেল ৬টা ২৫ মিনিটে, নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। সেখানে তিনি একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পোস্ট শেয়ার করে লেখেন— “ওরা মানুষ নয়, পশুর চেয়েও অধম।”
এই মন্তব্যটি যে নির্যাতনের নির্দেশদাতা স্বামী-স্ত্রীকে উদ্দেশ করেই, তা পরিষ্কার। অভিনেত্রী তাদের পশুর চেয়েও অধম উল্লেখ করে নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানান।
সঙ্গে তিনি করপোরেট প্রতিষ্ঠানটিকেও ধন্যবাদ জানান, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি
একটি প্রভাবশালী করপোরেট প্রতিষ্ঠান, যারা ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাড়ির মালিকদের একজনের সঙ্গে পেশাগতভাবে যুক্ত, তারা তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়— “আমরা এই ধরনের অমানবিক এবং ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এই উদ্যোগকে অনেকেই প্রশংসা করেছেন, বিশেষ করে সেলিব্রিটিরা, যারা সাধারণত করপোরেট ইমেজ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করেন।
পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই ঘটনাকে ‘বাংলাদেশের পশু সুরক্ষায় এক অন্ধকার দৃষ্টান্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা মনে করছেন, দেশের বর্তমান পশু সুরক্ষা আইনগুলোর প্রয়োগ একদিকে যেমন দুর্বল, তেমনি সচেতনতা ও মানবিকতা নামমাত্র।
অনেকে বলছেন, “একটা শিশু বা অসহায় প্রাণীর ওপর এমন বর্বরতা যারা করতে পারে, তারা সমাজে বসবাসের অধিকার রাখে না।”
বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরেরও আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ পশুর প্রতি এমন নির্দয় আচরণ করতে সাহস না পায়।
এমন একটি ঘটনায় সাদিয়া আয়মানের মতো অভিনেত্রীর দৃঢ় অবস্থান, শুধুই একজন সেলিব্রিটির প্রতিক্রিয়া নয়, বরং পশু অধিকার এবং মানবিকতার প্রশ্নে শিল্পীমনের জোরালো প্রতিবাদ। এই ঘটনা আমাদের সকলের জন্য একটি বার্তা বহন করে—অসহায় প্রাণীদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা কেবল একটি মানবিক কর্তব্যই নয়, এটি সভ্য সমাজের মাপকাঠিও বটে।
সরকার, প্রশাসন ও সমাজ যদি একযোগে সচেতন না হয়, তাহলে এই ধরনের নৃশংসতা বন্ধ করা কঠিন হবে। তাই এখনই প্রয়োজন আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও সহানুভূতিশীলতার বিকাশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ