
ছবি: সংগৃহীত
দেশের স্বর্ণ বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। শুক্রবার (১৬ মে) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমেছে, ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন করে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণে ভরিতে কমানো হয়েছে ৩,৪৫২ টাকা, যা আগের দাম ছিল ১,৬৯,১৮৬ টাকা এবং এখন কমে দাঁড়িয়েছে ১,৬৫,৭৩৪ টাকা।
নতুন ও পুরাতন দামের বিস্তারিত তুলনা:
স্বর্ণের ক্যারেট পূর্বের দাম (প্রতি ভরি) বর্তমান দাম (প্রতি ভরি) কমেছে
২২ ক্যারেট ১,৬৯,১৮৬ টাকা ১,৬৫,৭৩৪ টাকা ৩,৪৫২ টাকা
২১ ক্যারেট ১,৬১,৫০০ টাকা ১,৫৮,১৯৯ টাকা ৩,৩০১ টাকা
১৮ ক্যারেট ১,৩৮,৪২৮ টাকা ১,৩৫,৬০৫ টাকা ২,৮২৩ টাকা
সনাতন পদ্ধতি ১,১৪,৪৩৬ টাকা ১,১২,০৩২ টাকা ২,৪০৪ টাকা
উল্লেখ্য, স্বর্ণের মূল্য হ্রাস পেলেও রূপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেট রূপার দাম এখনো ২,৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের ২,৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ২,১১১ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ১,৫৮৬ টাকা প্রতি ভরি।
বাজুস আরও জানিয়েছে, স্বর্ণ বিক্রয়ের সময় সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি ক্রেতাকে বহন করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে এই মজুরি তারতম্য হতে পারে।
বাজুসের এই মূল্য হ্রাসের সিদ্ধান্তে সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেশের বাজারে গত কয়েক মাসে স্বর্ণের দাম বারবার রেকর্ড ছুঁয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের শুরুতে স্বর্ণের দাম প্রায় প্রতি মাসেই বেড়েছে, ফলে স্বর্ণ কেনায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণের দামে সামান্য পতন, এবং দেশীয় চাহিদা কিছুটা স্থির থাকার ফলে এই মূল্য হ্রাস সম্ভব হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান, আমদানি খরচ ও ভ্যাট নীতির উপর ভিত্তি করেই স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে।
বাংলাদেশে স্বর্ণের বাজার মূলত আমদানি নির্ভর। যদিও দেশে একটি স্বর্ণ নীতিমালা রয়েছে এবং বাজুস নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে থাকে, তবুও আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন, রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি এসব বিষয়ের ওপর মূল্য নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভরশীল।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাময়িকভাবে দাম কমলেও আগামী মাসগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা থাকায় স্বর্ণের দাম আবার বাড়তেও পারে। তাই যারা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে স্বর্ণ কিনতে চান, তারা এই সময়ে স্বর্ণ কেনাকে লাভজনক ভাবতে পারেন।
এই দামের পরিবর্তনে দেশে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ে গতি আসবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে বিবাহ, উৎসব ও উপহারমূলক কেনাকাটায় স্বর্ণের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
সব মিলিয়ে বাজুসের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তির খবর, অন্যদিকে এটি দেশের স্বর্ণবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ