
ছবি: সংগৃহীত
সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে নারী ক্রিকেট দলের জন্য এসেছে দুটো মিশ্র বার্তা। যেখানে নারী টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে কিছুটা মন খারাপের সংবাদ পাওয়া গেছে, সেখানে নারী ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের নারী দল “জ্যোতিরা” একধাপ এগিয়ে সাত নম্বরে অবস্থান করে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। এই উন্নতিই অনেকটাই শীতল করেছে ক্রিকেট ভক্তদের মন।
সম্প্রতি বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদ (আইসিসি) প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের মে থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নারী ওয়ানডে ক্রিকেট দলের বার্ষিক র্যাংকিং হালনাগাদ। এ রিপোর্টে গত এক বছরের মধ্যে (২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) জ্যোতিরাদের পারফরম্যান্সের ১০০ শতাংশ এবং আগের দুই বছরের (২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) পারফরম্যান্সের ৫০ শতাংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই হিসেবেই দেখা গেছে বাংলাদেশের নারী ওয়ানডে দলের উল্লেখযোগ্য উন্নতি।
গত এক বছরে বাংলাদেশ নারী দল মোট ১১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে সাতটিতে জয় লাভ করেছে এবং চারটিতে পরাজিত হয়েছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নারী দল আইসিসি র্যাংকিংয়ে এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সপ্তম অবস্থানে উঠে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের রেটিং পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৭৯, যা তাদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানসহ শক্তিশালী দলগুলোর পাশে দাঁড় করিয়েছে।
এই উন্নতি অন্য দেশের দলগুলোর অবস্থানকেও প্রভাবিত করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যারা আগে বাংলাদেশের থেকে উপরের অবস্থানে ছিল, তারা এবার দুই ধাপ পিছিয়ে নওয় নম্বরে চলে এসেছে। পাকিস্তানও এক ধাপ এগিয়ে এখন আট নম্বরে অবস্থান করছে, যেখানে তাদের রেটিং পয়েন্ট ৭৮, বাংলাদেশ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট কম। তবে শীর্ষ ছয় স্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তালিকার প্রথম থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কা অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের এই সাফল্যে দেশের ক্রিকেট প্রীতি ও যুবসমাজে নতুন উদ্দীপনা এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে আসা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর কঠোর পরিশ্রম এবং খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ এই উন্নতির মূল কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তবে এই সাফল্যের মাঝে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে কিছুটা খারাপ সংবাদও এসেছে। নারী টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দশ নম্বরে নেমে এসেছে, যা গত কয়েক বছরে তাদের কৃতিত্বের তুলনায় খানিকটা হতাশাজনক। তবে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের এই উন্নতি তা কিছুটা প্রশমিত করেছে এবং দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারী ক্রিকেটে উন্নতির জন্য প্রয়োজন আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন এবং নিয়মিত প্রতিযোগিতার সুযোগ। যাতে খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মানে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং দল ভবিষ্যতে শীর্ষস্থান দখল করতে পারে।
এই ইতিবাচক হালনাগাদের মধ্যে বাংলাদেশের নারীরা যেন আরো বড় অর্জন করে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারে—এটাই এখন প্রত্যাশার বিষয়। দেশের ক্রিকেট ভক্তরা এখন দলের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতি সমর্থন ও শুভকামনা জানাচ্ছেন।
এভাবেই জ্যোতিরার দৃষ্টিকোণ থেকে সপ্তাহখানেকের দুই ধ্রুব বার্তার মধ্যে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াই বড় সুখবর হয়ে উঠেছে। দেশের নারীদের ক্রিকেটে এগিয়ে চলার পথে এটি এক বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ