ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এ যেন এক গর্বের মুহূর্ত। দেশের হয়ে নিয়মিত পারফর্ম করে যাওয়া অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ অর্জন করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত 'মাসসেরা ক্রিকেটার' হওয়ার সম্মান। এপ্রিল মাসের পারফরম্যান্স বিবেচনায় তাকে ‘আইসিসি প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) আইসিসির পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা আসে।
এই প্রথমবারের মতো এই সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছেন মিরাজ। নিউজিল্যান্ডের পেসার বেন সিয়ার্স ও জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্লেসিং মুজারাবানিকে পেছনে ফেলে মাসসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এটি শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরেকটি উজ্জ্বল সংযোজন।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে এই পুরস্কার জিতেছিলেন কেবল দুইজন—অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো মেহেদী হাসান মিরাজের নাম, যিনি এর মাধ্যমে নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেন।
মিরাজের এই স্বীকৃতির পেছনে মূল অবদান তাঁর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। দুই ম্যাচের এই সিরিজে বল হাতে তিনি ১৫ উইকেট শিকার করেন, যার মধ্যে ছিল প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার ব্যাটারদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে দ্বিতীয় টেস্টে একটি চমৎকার শতক করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
তাঁর এই সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি কেবল সিরিজ সেরা হননি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তাঁর এই ধারাবাহিক ও নিখুঁত পারফরম্যান্সই তাঁকে এনে দেয় আইসিসির মাসসেরা হওয়ার বিরল সম্মান।
আইসিসি থেকে মাসসেরা পুরস্কার হাতে পেয়ে আবেগে আপ্লুত মিরাজ বলেন— “আইসিসি মাসসেরার পুরস্কার জেতা এক অবিশ্বাস্য সম্মানের। আইসিসি পুরষ্কার যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য চূড়ান্ত স্বীকৃতি এবং এটি পাওয়া আমার কাছে অনেক অর্থবহ। এই ধরণের মুহূর্তগুলো আমাকে আমার যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়।”
তিনি আরও যোগ করেন— “আমি সত্যিই আনন্দিত। এই পুরস্কার আমার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে। ক্রিকেটার হিসেবে, আমরা আমাদের ভক্তদের মনে প্রভাব ফেলতে এবং আনন্দ আনতে স্বপ্ন দেখি। আইসিসির কাছ থেকে এই ধরনের স্বীকৃতি আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে অনুপ্রাণিত করে।”
মাত্র ২৭ বছর বয়সেই মেহেদী হাসান মিরাজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হিসেবে। শুরুর দিকে স্পিনার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ব্যাট হাতে দক্ষভাবে গড়ে তুলেছেন। শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংয়েও তাঁর অবদান দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে নেমে অনেক সময় দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন তিনি।
এমন একজন খেলোয়াড়ের আইসিসি স্বীকৃতি পাওয়া মানেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটি এক ধরনের আন্তর্জাতিক সমর্থন ও আত্মবিশ্বাসের চিত্র বহন করে।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের মধ্যেও এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করেছে আইসিসি। এবার এই পুরস্কার উঠেছে স্কটল্যান্ডের ক্যাথরিন ব্রাইসের হাতে। তিনি পিছনে ফেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক হেইলি ম্যাথিউস এবং পাকিস্তানের পেসার ফাতিমা সানাকে।
নারী ক্রিকেটেও মাসসেরা নির্বাচন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা করে নিতে।
মেহেদী হাসান মিরাজের এই অর্জন কেবল তাঁর একক কৃতিত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতিফলন। এক সময়ের তরুণ প্রতিভা এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া একজন পরিণত ক্রিকেটার। তার আইসিসির মাসসেরা হওয়া প্রমাণ করে—নিয়মিত পরিশ্রম, দৃঢ় মানসিকতা ও খেলার প্রতি ভালোবাসা থাকলে সাফল্য অনিবার্য।
এ অর্জন শুধু আজকের জন্য নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা, যা তরুণ ক্রিকেটারদের মনে আরও সাহস যোগাবে। এখন শুধু অপেক্ষা—এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মিরাজ যেন বাংলাদেশের হয়ে আরও অনেক বড় মাইলফলক স্পর্শ করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



