
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের তারকা বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান শেষ মুহূর্তে জায়গা করে নিয়েছেন চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২৫-এর বাকি অংশে। দিল্লি ক্যাপিটালস তাকে ৬ কোটি রুপিতে দলে অন্তর্ভুক্ত করেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর সময় নিলামে নাম থাকলেও মুস্তাফিজের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে দিল্লি ক্যাপিটালসের এক বিদেশি ক্রিকেটার টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোয় নতুন সুযোগ তৈরি হয় মুস্তাফিজের জন্য। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়ে নতুন ঠিকানা পেলেন ‘দ্য ফিজ’।
আইপিএলের অন্যতম ফ্র্যাঞ্চাইজি দিল্লি ক্যাপিটালস তাদের স্কোয়াডে অস্ট্রেলিয়ান তরুণ ব্যাটসম্যান জ্যাক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের পরিবর্তে মুস্তাফিজকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্যক্তিগত কারণে আইপিএল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জ্যাক। বুধবার আইপিএল কর্তৃপক্ষ এক অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
মূলত সাময়িক বিকল্প হিসেবেই মুস্তাফিজকে নেওয়া হয়েছে। আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, মৌসুমের মাঝপথে নেওয়া কোনো খেলোয়াড়কে পরবর্তী আসরের জন্য ধরে রাখতে পারে না ফ্র্যাঞ্চাইজি। ফলে চলমান আইপিএলের বাকি অংশেই শুধু দিল্লির হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাবেন মুস্তাফিজ।
চলতি মৌসুমের নিলামে মুস্তাফিজুর রহমানের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। কিন্তু কোনো দলই আগ্রহ দেখায়নি তার প্রতি। অথচ কয়েক বছরের আইপিএল ক্যারিয়ারে তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের কার্যকারিতা, বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার কাটা ঘূর্ণি এবং সুইংয়ের বৈচিত্র্য প্রতিপক্ষের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তার সেই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটেছে শেষ পর্যন্ত ৬ কোটি রুপির চুক্তিতে।
এই পরিমাণ অর্থে দল পেয়ে মুস্তাফিজ এখন আইপিএলে বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। এর আগে ২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ৬ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। সে সময়ের বাজারমূল্যে যা প্রায় ৪ কোটি টাকার সমান ছিল। কিন্তু এবার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছেন মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজের আইপিএল ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে, যেখানে অভিষেক মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এরপর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস, দিল্লি ক্যাপিটালস এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলেছেন তিনি। এবার আবারও পুরোনো ঠিকানা দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন।
এই পর্যন্ত আইপিএলে মুস্তাফিজ খেলেছেন ৫৭টি ম্যাচ, উইকেট নিয়েছেন ৬১টি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে ১০৬ ম্যাচে তার শিকার ১৩২ উইকেট।
টেবিলে বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস ১১ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার দৌড়ে এখনও টিকে রয়েছে দলটি। তাদের সামনে বাকি রয়েছে চারটি ম্যাচ। প্রতিটি ম্যাচই হতে পারে ‘মুস্তাফিজ শো’ প্রদর্শনের সুযোগ। সময়মতো পারফর্ম করতে পারলে দলকে প্লে-অফে নিতে বড় অবদান রাখতে পারেন তিনি।
এছাড়া দিল্লির ঘন ঘন পেসার বদল ও ইনজুরি সমস্যার কথা বিবেচনায় নিলে, মুস্তাফিজের মতো অভিজ্ঞ বোলারের অন্তর্ভুক্তি দলের বোলিং বিভাগে নতুন গতি আনবে বলেই আশা করছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আইপিএলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব মানেই আলাদা আগ্রহ। আর মুস্তাফিজুর রহমানের মতো বিশ্বমানের বোলার যখন কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির হাল ধরেন, তখন তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। নিলামে অবিক্রীত থেকে শেষ সময়ে বিশাল অঙ্কে সুযোগ পাওয়া মুস্তাফিজের গল্পটাও তাই অনুপ্রেরণামূলক। দিল্লির হয়ে তার প্রত্যাবর্তন কতটা সফল হয়, তা দেখতে মুখিয়ে থাকবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ