
ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই পদক্ষেপকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে তার নিজের জন্যও ‘ব্যক্তিগত সম্মানের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রিয়াদে আয়োজিত সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প এই আহ্বান জানান। উল্লেখযোগ্যভাবে, ওই অনুষ্ঠানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি বসেছিলেন মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের পাশে। ফোরামের এই মঞ্চ থেকেই ট্রাম্প সরাসরি যুবরাজের প্রতি আহ্বান জানান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।
ট্রাম্প বলেন, “আমার দৃঢ় প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা এবং এমনকি স্বপ্ন—সৌদি আরব শিগগিরই আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দেবে। এটি আপনার দেশের জন্য এক বিশাল মর্যাদার বিষয় হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের পটভূমি
২০২০ সালে প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডস ছিল একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। ওই সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান এবং মরক্কো ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে এই চুক্তিতে অন্যতম প্রভাবশালী আরব রাষ্ট্র সৌদি আরব এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি।
যদিও গত কয়েক বছরে সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে একাধিক গোপন আলোচনার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তবুও আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়নি। বিশেষ করে ২০২৩ সালের শেষ ভাগে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ এবং ইসরাইলি বাহিনীর নির্লজ্জ আগ্রাসনের ফলে সৌদি জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে রিয়াদ ও তেলআবিবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনা বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে।
বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করলেন ট্রাম্প
ট্রাম্প দাবি করেন, তার সময়ের উদ্যোগ সফলভাবে এগোচ্ছিল, কিন্তু বর্তমান বাইডেন প্রশাসন সেটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, “আব্রাহাম অ্যাকর্ডস শান্তির জন্য ছিল। এটি অত্যন্ত সফলভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি।”
এই বক্তব্যে ট্রাম্প বোঝাতে চেয়েছেন, যদি তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সেই কর্মসূচি নতুন উদ্যমে শুরু হবে এবং সৌদি আরবকে যুক্ত করার কাজ অগ্রাধিকার পাবে।
ইরান প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি
ভাষণে ট্রাম্প আবারও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরতে রাজি না হয়, তাহলে তার দেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হবে। আমি তাদের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনব। সময় খুব কম—তাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
এই হুঁশিয়ারি মূলত তেহরানকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সক্রিয়তা ও গাজা যুদ্ধের ছায়া
যদিও ট্রাম্পের চলমান সফরে ইসরাইল সফরের কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নেই, তবুও তার বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে আবারও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং সৌদি নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশলের অংশ।
তবে গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এখন কোনো অবস্থান নিতে অস্বস্তিতে রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী এ দেশটি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মুসলিম জনগণের প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে পারে।
ট্রাম্পের বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব ও মেরুকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের বাস্তবতা। এমন প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের অবস্থান কী হবে, তা এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই গভীর আগ্রহ ও কূটনৈতিক গুরুত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ