
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ছয় মাসের দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আলোয় ফিরতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। গত বছরের ৩০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে অনুষ্ঠিত আবুধাবি টি-টেন লিগে শেষবার মাঠে দেখা গিয়েছিল বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে। তারপর কেটে গেছে ১৬৯ দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ আবার মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) চলমান আসরে আজ রাতে পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলতে দেখা যাবে সাকিবকে।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জটিলতায় মাঠ থেকে ছিটকে পড়া সাকিব নিজের অনুশীলন চালিয়ে গেছেন নিরবে, নিজ উদ্যোগে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার সময়ই তিনি ক্রিকেটে ফেরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। এরপর সুযোগ তৈরি হয় তার জন্য—পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনার কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া পিএসএল ফের চালু হলে, লাহোর কালান্দার্স শিবিরে কিছু বিদেশি খেলোয়াড় ফিরতে অপারগ হন। ঠিক তখনই সাকিবকে অন্তর্ভুক্ত করে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
ইতোমধ্যে ইসলামাবাদে পা রেখেছেন তিনি। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হবে লাহোর কালান্দার্স বনাম পেশোয়ার জালমির ম্যাচ। সাকিব নিজেও এই ম্যাচে খেলার ব্যাপারে আগ্রহী ও প্রস্তুত। ইসলামাবাদে পৌঁছেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিএসএলে আসতে পেরে রোমাঞ্চিত। কালকের (আজকের) ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করি দারুণ ম্যাচ হবে।’
তবে সাকিবের এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে রয়েছে কঠিন এক বাস্তবতা। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সাকিবের রাজনৈতিক পরিচয় তাকে ভিন্নভাবে আঘাত করেছে। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত সাংসদ এবং দলটির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন মাগুরা-১ আসন থেকে। সরকারের পতনের পর নতুন শাসকগোষ্ঠীর হাতে তিনি পরিণত হন একটি রাজনৈতিক প্রতীকে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে একাধিক মামলা, যার ফলে দেশে ফেরা অনিরাপদ হয়ে পড়ে। দেশে ফিরে অবসরের পরিকল্পনাও ছিল সাকিবের, কিন্তু ভিসা জটিলতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগই পাননি তিনি।
এর মাঝে ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও জটিলতা তৈরি হয়। ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এক পর্যায়ে সেটা ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হয়। তিন দফা পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি বোলিং অ্যাকশন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে পুনরায় স্বীকৃতি পান। কিন্তু এত কিছুর পরও তার মাঠে ফেরা হচ্ছিল না। বিসিবির অনুমোদন বা প্রাধান্য না থাকায় কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিও আগ্রহ দেখায়নি তাকে নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত পিএসএল যেন আশীর্বাদ হয়ে এল সাকিবের জন্য। রাজনৈতিক ও ক্রীড়াজীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলে অবশেষে একটি বড় মঞ্চে আবার দেখা যাবে এই বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে।
ভক্তদের আগ্রহ তুঙ্গে—সাকিব কতটা ছন্দে ফিরতে পারেন, কতটা প্রভাব রাখতে পারেন ম্যাচে, তা জানতে অপেক্ষা শুধু রাত ৯টার। আবারও মাঠে নেমে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচ তার জন্য শুধু একটি খেলা নয়—এ যেন নিজের হারিয়ে যাওয়া অবস্থান পুনরুদ্ধারের এক প্রতীকী লড়াই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ