
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত নতুন রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিল না করা পর্যন্ত কলম বিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, অধ্যাদেশে কোনো ধরনের সংশোধন বা সংযোজন নয়, একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বাতিলই তাদের একমাত্র দাবি। এ দাবি পূরণ না হলে তারা আলোচনায়ও বসবেন না।
রোববার (১৮ মে) ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার (১৯ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এনবিআর এবং এর অধীন কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট, কর অঞ্চলসহ সব শাখায় ৬ ঘণ্টার কলম বিরতি পালিত হবে। আগের দিন রোববারও দেশব্যাপী একযোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
এ সময় ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা, অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, “আমরা কোনো আলোচনায় বসব না যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হয়। সংশোধন বা পরিবর্তন নিয়ে কোনো কথা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থ উপদেষ্টা যদি সত্যিই আলোচনায় বসতে চান, তবে সেটা প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে কিনা—সে বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না। যদি প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমন্ত্রণ আসে, তাহলে আমরা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাব।”
এ বিষয়ে অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা জানান, “আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার বিকেল ৩:৩০টায় আলোচনায় বসবেন। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আমরা এখনো পাইনি। তাই সিদ্ধান্তহীনতায় আছি যে এটি কতটা বৈধ ও কার্যকর।”
সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন ছাড়াই অন্ধকারে রেখে, দ্রুততার সঙ্গে ও গোপনীয়ভাবে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা রাজস্ব ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান এনবিআরকে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিলুপ্ত ঘোষণা করে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে; যা আন্তর্জাতিক রীতি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার পরিপন্থি।”
এ সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, “এই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। টিআইবি বলেছে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবমুক্ত একটি স্বতন্ত্র সংস্থা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য, অথচ সরকার বিপরীত পথ বেছে নিয়েছে।”
সেহেলা আরও বলেন, “এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে ফুলটাইম চেয়ারম্যানবিহীনভাবে চলছে। সচিবালয়ের সচিবেরা এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। এতে কাজের গুণগতমান ব্যাহত হচ্ছে।”
ঐক্য পরিষদের পক্ষে উপ-কমিশনার সানজিদা খানম বলেন, “আমরা সবসময় সংস্কারের পক্ষে। তবে সেই সংস্কার হতে হবে বাস্তবভিত্তিক, অংশীজনের মতামত নিয়ে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে। এই আন্দোলন করদাতা ও সাধারণ মানুষের সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা দুঃখিত, তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এটি জরুরি।”
তিনি আরও জানান, দাবি আদায় হলে অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় কাজ করে অনিষ্পন্ন কাজগুলো শেষ করা হবে।
সানজিদা খানম বলেন, “আমরা রোববার জেনেছি, একজন আইনজীবী অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তবে ঐক্য পরিষদের সঙ্গে এ রিটের কোনো সংযোগ নেই। তবুও আমরা এর অগ্রগতির দিকে নজর রাখছি।”
আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট এগজিকিউটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকায়েভ), মিনিস্টেরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএম), তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি (বাকাস), ট্যাকসেস ইন্সপেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ট্যাক্সেস এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, ১৭-২০তম গ্রেড কর্মচারী ইউনিয়ন, এনবিআর কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ও গাড়িচালক সমিতি।
সবশেষে সানজিদা বলেন, “সরকার যদি আলোচনায় বসতে চায়, তবে আনুষ্ঠানিক ও সুস্পষ্ট আমন্ত্রণ জানাতে হবে। এর আগ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি বহাল থাকবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত নতুন রাজস্ব অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কর্মকর্তাদের আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। সরকারী আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও অনির্দিষ্টতা ও আনুষ্ঠানিকতার অভাবে কলম বিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ—এ আন্দোলনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করা।
বাংলাবার্তা/এসজে