
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আবারও দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অযথা জটিল না করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে। এই আহ্বান তিনি সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রদান করেন। তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠা না করা হলে পতিত স্বৈরাচার মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে উঠবে। লোভ-প্রলোভনের বাইরে থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের জন্য দায়িত্বশীলতা পালন করা।
শনিবার (১৭ মে) গুলশানের লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত এনডিএম-এর অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এই বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, "আমরা পুনরায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি যেন তারা পরিস্থিতি অযথা জটিল না করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সুস্থ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।"
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই একযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে সেই আহ্বানে কোন সাড়া মেলেনি। তিনি সমালোচনা করেন, যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সরকার ‘অল্প সংস্কার-বেশি সংস্কার’ নামক অভিনব শর্ত আরোপ করে সময় নষ্ট করছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ আজও অজ্ঞাত। এই কারণে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন দাবিতে মানুষ রাস্তায় নামছে, যা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।” তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, “যদি সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের প্রত্যাশা অনুধাবন করতে ব্যর্থতা থাকে, তাহলে অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য এবং জুলাই আন্দোলনের হাজারো শহীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু গত দশ মাসেও সরকার এখনও ওই আন্দোলনের শহীদ ও হতাহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। অন্যদিকে গাজা যুদ্ধের হতাহতদের সংখ্যা ও তালিকা ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়, যা সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তুলে ধরে।
তারেক রহমান প্রশ্ন তুলেন, “বর্তমান সরকার কি হতাহতদের বিষয়ে উদাসীন নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? এই প্রশ্ন দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুতর। দশ মাসেও শহীদদের তালিকা প্রকাশ করতে না পারা সরকারের ক্ষমতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
এছাড়া, তিনি বর্তমান সরকারের জবাবদিহিতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন, করিডোর কিংবা বন্দর দেওয়া-না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচিত সংসদের ব্যাপার, অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। “এই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক নয়। এ কারণে জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।”
অনুষ্ঠানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার প্রসঙ্গেও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “এনবিআর সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো দ্বিমত নেই, তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে সংস্কার শুরু করায় বিপরীত ফলাফল দেখা দিয়েছে। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা চলতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির কারণ হতে পারে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই আহ্বান ও বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও স্পষ্ট ও সৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, মহাসচিব মমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য পারভেজ খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই রাজনৈতিক আবহাওয়ায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া চলছে। তবে একটাই দাবি – নির্দিষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ছাড়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ