
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তার দেশ সর্বশেষ সামরিক অভিযানে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করেছে, তবে সত্ত্বেও তারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। শুক্রবার (১৬ মে) ইসলামাবাদের পাকিস্তান মনুমেন্ট চত্বরে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধ জিতেছি, কিন্তু শান্তি চাই। আমরা শত্রুকে শিক্ষা দিয়েছি, কিন্তু আমরা আগ্রাসনের নিন্দা করি। আমরা চাই এই উপমহাদেশ হোক শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নমুখী।”
এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ‘অপারেশন বুনইয়ান উম মারসুস’-এর সাফল্য উদযাপন এবং ইউম-ই-তাশাক্কুর বা ‘ধন্যবাদ দিবস’ উপলক্ষে। এ উপলক্ষে ইসলামাবাদে জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান, সরকারের বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রী, বিদেশি কূটনীতিক, বীর সেনানী এবং শহীদ পরিবারগুলো।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পরিমিত ও কৌশলগত প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছি যুদ্ধ নয়, শান্তি। কিন্তু যখন সীমা লঙ্ঘন হয়, তখন জবাব দিতে হয়।”
তিনি জানান, ৯ ও ১০ মে রাতে শীর্ষ নিরাপত্তা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ভারতের আগ্রাসনের পর একটি সংযত কিন্তু স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে কীভাবে এগোনো হয়, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাত আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনীর সিকিউর লাইনে আমাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, শত্রুকে এমনভাবে আঘাত করতে দিন যাতে তারা তা চিরকাল মনে রাখে।’ আমি তাকে অনুমতি দেই।”
এর পরপরই পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়। সেনাপ্রধান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা জবাব দিয়েছি, এখন শত্রুর পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ আসছে।’ প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, “আমি তখন বলেছি, ‘যখন শত্রুর মাথা ঘুরে যায়, তখনই আসল আঘাত হয়। তাই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করুন।’ এটি কূটনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর সময় ছিল।”
শাহবাজ শরিফ তার বক্তব্যে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তি এবং কৌশলগত সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের বিমানবাহিনী শত্রুপক্ষকে বিস্মিত করেছে। এমন প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ শুধুমাত্র আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের সামরিক দক্ষতা নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে—যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে।”
তিনি বলেন, “এই অপারেশনের সাফল্য শুধু সামরিক নয়, এটি কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিজয়ও। এতে দেশের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়েছে এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও আমাদের সক্ষমতা দেখে বিস্মিত।”
এই উপলক্ষে আয়োজিত ইউম-ই-তাশাক্কুর অনুষ্ঠানে দেশের বীর সেনানীদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয় এবং শহীদ পরিবারদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল দেশাত্মবোধক গান, জাতীয় প্রতিরক্ষা উপস্থাপনা এবং বাহিনীর সরঞ্জাম ও কার্যক্ষমতার প্রদর্শনী।
শাহবাজ শরিফ বলেন, “এই দিনটি কেবল কৃতজ্ঞতা জানানোর নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা পুনর্নবায়নের দিনও—যে আমরা আমাদের মাতৃভূমির প্রতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি, কিন্তু একইসঙ্গে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগোতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী কেবল শক্তির প্রতীক নয়, এটি আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি। যারা আমাদের শান্তি বিঘ্নিত করতে চায়, তাদের জন্য এটি সতর্কবার্তা।”
শাহবাজ শরিফ তার বক্তব্যের একাধিকবারই উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানের সামরিক জয়ের উদ্দেশ্য কখনও আগ্রাসন নয়। বরং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে উপমহাদেশে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “আমরা চাই ভারত আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে থাকুক, শত্রু হিসেবে নয়। আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়া হয়ে উঠুক অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি মডেল, যুদ্ধক্ষেত্র নয়।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই সামরিক প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তীতে শান্তির বার্তা এক ধরনের কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টা, যা একদিকে জাতীয় মনোবল জাগিয়ে তোলে, অপরদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে অবস্থানকে তুলে ধরে।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মূলত একদিকে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন যে, পাকিস্তান দুর্বল নয় এবং প্রয়োজনে আত্মরক্ষায় সক্ষম, অন্যদিকে প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি শান্তি ও সংলাপের আহ্বানও জানিয়েছেন। এটি স্পষ্টতই পাকিস্তানের নতুন কৌশলগত অবস্থান—“ক্ষমতা ধরে রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠা”।
বাংলাবার্তা/এমএইচ