
ছবি: সংগৃহীত
সেলিব্রিটি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০২৫ ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক এখন শুধু খেলাধুলা কিংবা বিনোদনের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি এখন আদালত পর্যন্ত গড়ানোর পথে। আয়োজনে ‘অশ্লীলতা ছড়ানোর’ অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন অভিযুক্ত শিল্পীরা। তালিকায় থাকা অন্যতম মডেল ও অভিনেত্রী মারিয়া মিম সরাসরি অভিযোগ করেছেন, এই নোটিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মানহানিকর। আর তাই তিনি নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন এক নোটিশের মাধ্যমে ৬ জন মডেল-অভিনেত্রী ও ৩ নির্মাতার বিরুদ্ধে ‘অশ্লীলতা ছড়ানো’ এবং ‘সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের’ অভিযোগ এনেছেন। এতে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন—মারিয়া মিম, সিনথিয়া ইয়াসমিন, কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, শাম্মি ইসলাম নিলা এবং আলিশা। নোটিশে দাবি করা হয়, ‘খেলাধুলার আবরণে অপসংস্কৃতি ও নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’
এই অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মারিয়া মিম বলেন, ‘এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে ওই আইনজীবী ভাইরাল হওয়ার জন্যই এই নাটক তৈরি করেছেন।’ তিনি বলেন, প্র্যাকটিস বা ওয়ার্মআপে তিনি কী পরবেন, তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। মাঠে খেলার সময় অবশ্যই নির্ধারিত জার্সি পরেই খেলায় অংশগ্রহণ করা হয়েছে।
মিম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমার পোশাক বা চলাফেরা নিয়ে কারও ব্যক্তিগত মন্তব্য করার কোনো অধিকার নেই। এসব বিষয়কে ঘিরে সামাজিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে হওয়া উচিত আয়োজক প্রতিষ্ঠান কিংবা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। কারণ তারা বিষয়গুলো প্রচার করেছে। আমাদের দোষ কী? আমরা তো শুধু খেলায় অংশ নিয়েছি।’
মারিয়া মিম এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘এই আইনজীবীর কার্যক্রম আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে। তার বক্তব্যের পর যেসব পুরনো ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো আবারও ভাইরাল হয়ে গেছে। এতে করে আমি সামাজিকভাবে অপমানিত হয়েছি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘খেলার আগে ওয়ার্ম আপের সময় আমাদের কিছু মুহূর্ত মোবাইল ফোনে ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সেসব মুহূর্তকে “অশ্লীলতা” বলে তুলে ধরা হয়েছে। যেভাবে এসব প্রচার করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সম্মানহানিকর।’
মিম আরও দাবি করেন, ‘যে আইনজীবী এতটা সোচ্চার, তিনি খেলা চলাকালীন কিছু বলেননি। বরং খেলা শেষ হওয়ার পর এসব বিষয় সামনে এনেছেন। এতে মনে হয়, তার আসলে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল। সম্ভবত তার নিজের পরিচিতি বাড়ানোই ছিল লক্ষ্য।’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিনোদন অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে মিম ও অন্যান্য অভিনেত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শুধুমাত্র পোশাক বা চলাফেরা নিয়ে শিল্পীদের নামে মামলা বা লিগ্যাল নোটিশ কতটা যৌক্তিক?
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিনোদন অঙ্গনের শিল্পীরা যেমন হতাশা প্রকাশ করেছেন, তেমনি আইনি জটিলতা তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। মডেল-অভিনেত্রী মারিয়া মিমের মানহানির মামলা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিষয়টি যে আরও বৃহৎ পরিসরে গড়াবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সেলিব্রিটি ক্রিকেটের নামে ‘অপসংস্কৃতি’ ছড়ানোর অভিযোগের সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু অভিযোগ উত্থাপনের ধরন ও তার পরিণতি এখন শিল্পী, আইনজীবী ও সমাজের মাঝে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, মিমের ঘোষিত মামলা আদৌ হয় কি না এবং সেটি কী ধরনের আইনি প্রভাব ফেলে এই বিতর্কিত আয়োজনে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ