
ছবি: সংগৃহীত
দেশের শোবিজ অঙ্গনে সম্প্রতি এক আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন টেলিভিশন অভিনেতা শামীম হাসান সরকার ও অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া। শুটিং সেটে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা ঘিরে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জেরে উত্তপ্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে মিডিয়া জগত। তবে অবশেষে সব জটিলতা কাটিয়ে, আলোচনার কেন্দ্রে থাকা অভিযোগ থেকে নিজের অবস্থান থেকে সরলেন প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া। তিনি স্বীকার করেছেন, রাগের মাথায় কিছু ভুল মন্তব্য করেছিলেন, যার ফলে পুরো ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ অভিনয়শিল্পী সংঘের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি সালিশি বৈঠকে বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংঘের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, দুই শিল্পী মুখোমুখি বসে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করছেন এবং নিজেদের অবস্থান থেকে ভুল স্বীকার করছেন। বিশেষ করে, প্রিয়াঙ্কা স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, শামীম তাকে ধর্ষণের হুমকি দেননি, এমনকি তাকে স্পর্শও করেননি। সেই সময় তিনি রাগের মাথায় অতি আবেগপ্রবণ হয়ে এমন কথা বলে ফেলেন।
প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগে প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনেন। তিনি দাবি করেন, শামীম শুটিং সেটে তাকে গালিগালাজ করেছেন, মারধরের চেষ্টা করেছেন এবং এমনকি ধর্ষণের হুমকিও দিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকার সম্প্রচার হওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শামীম হাসান সরকারও এর পরদিনই এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
শোবিজ অঙ্গনের অন্যান্য সহশিল্পীরাও এ ঘটনায় বিভক্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে শামীমের পক্ষ নেন, আবার কেউ কেউ প্রিয়াঙ্কার অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে বলেন। বিষয়টি জটিল আকার নেওয়ায় অভিনয়শিল্পী সংঘ মধ্যস্থতায় এগিয়ে আসে।
অভিনয়শিল্পী সংঘের অফিসে অনুষ্ঠিত এই সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই পক্ষের পাশাপাশি সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্যরাও। বৈঠকের একপর্যায়ে শামীম হাসান সরকার বলেন, “শুটিং সেটে ভুল বোঝাবুঝির কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। আমি যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, বিশেষ করে আমার নারী সহশিল্পীকে, তাহলে তার কাছে এবং দর্শকদের কাছে দুঃখিত। আমি ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকব।”
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সংঘের পক্ষে জানানো হয়, “উভয় পক্ষই নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রেখে ভবিষ্যতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সংঘ মনে করে, এই ঘটনা শিল্পীসমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও পেশাগত দায়বদ্ধতার একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে।”
প্রিয়াঙ্কা বৈঠকে বলেন, “ঘটনাটির সময় আমার ভুল হয়েছিল। আমি রাগের মাথায় কিছু কথা বলে ফেলি, যা বলা উচিত হয়নি। আমি স্বীকার করছি, শামীম ভাই আমাকে স্পর্শ করেননি বা এমন কিছু করেননি, যা আমি মিডিয়ায় বলেছিলাম। আমি একজন নতুন শিল্পী, অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। সেই অনভিজ্ঞতা থেকেই সংবাদমাধ্যমে গিয়ে কথা বলেছি। এখন বুঝতে পারছি, শিল্পী সংঘে প্রথমেই জানানো উচিত ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ঘটনা যদি ভবিষ্যতে ঘটে, তাহলে আমি পেশাগতভাবে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করব। আমি দুঃখিত যদি আমার কথায় কারো সম্মানহানি হয়ে থাকে।”
পুরো ঘটনার নিষ্পত্তি দেখে অনেক সিনিয়র শিল্পী ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তারা বলেন, “যেকোনো পেশাগত দ্বন্দ্ব মীমাংসার মাধ্যমে সমাধান হওয়াই শ্রেয়। সংঘের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়।”
সিনিয়র অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, “আমরা সবাই ভুল করি। কিন্তু সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটাই বড় বিষয়। এ ঘটনায় দুইজন শিল্পী নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।”
অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রাথমিকভাবে এত বড় অভিযোগ কেন মিডিয়ার সামনে আনা হলো, এবং সেটি কোনো প্রমাণ ছাড়াই? তবে এখন যেহেতু উভয় পক্ষ একমত হয়েছে, তাই অনেকেই চাইছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে শিল্পীদের মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আরও জোরদার হোক।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, আবেগ ও উত্তেজনার মুহূর্তে বলা কিছু কথা কীভাবে বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি ও পেশাগত সংকটে পরিণত হতে পারে। সেই সঙ্গে এটি শিল্পী সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও রেখে গেল—যেকোনো অভিযোগ ও বিরোধ পেশাগত কাঠামোর মধ্যেই সমাধান করা উচিত।
প্রিয়াঙ্কা ও শামীমের মতো জনপ্রিয় দুই শিল্পীর এই ঘটনায় শোবিজের দায়িত্বশীলতা ও আত্মসমালোচনার অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এখন দর্শক ও সহকর্মীরা চাইছেন, তারা যেন ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করে আরও ভালো শিল্প উপহার দিতে পারেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ