
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের কর প্রশাসনে বড় ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত দিয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ট্যাকসেশন অ্যাসোসিয়েশনের সব ধরনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ১৭ মে (শনিবার) অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং মহাসচিব স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এই নাটকীয় ঘোষণার পেছনে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং সম্প্রতি জারীকৃত একটি অধ্যাদেশ। উভয় বিষয় নিয়ে বিসিএস ট্যাকসেশন অ্যাসোসিয়েশন গভীর পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে, এই পরিবর্তনগুলো কর বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা এবং পেশাগত হতাশা তৈরি করেছে। তারা মনে করছেন, দ্রুত এই উদ্বেগ দূরীকরণ এবং চলমান অনিশ্চয়তার অবসান এখন সময়ের দাবি।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উভয় অনুবিভাগ—আয়কর এবং কাস্টমস—এর সিনিয়র সদস্যদের সমন্বয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ট্যাকসেশন অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বিসিএস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা, যা শিগগির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা আপাতত মূলতবি রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র ওই সভা নয়—অ্যাসোসিয়েশনের সকল পর্যায়ের কর্মকাণ্ড, কার্যক্রম এবং প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের গঠনতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন এবং মাঠপর্যায়ের কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা সংশ্লিষ্ট কিছু প্রস্তাব বা সুপারিশ নিয়ে বিসিএস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ বিরাজ করছিল। বিশেষ করে, যেসব সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ মাঠপর্যায়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এনবিআরের সংস্কারপ্রক্রিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল কার্যক্রম। এটি কেবল কাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে হাজার হাজার কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ ও পেশাগত নিরাপত্তা। তাই এ ধরনের সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণমূলক নীতিনির্ধারণ অপরিহার্য।
অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপাতত কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং এনবিআর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে আবারও অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম পুনরায় চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘আমরা আশা করি কর ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া হবে।’
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজস্ব খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্তরটি যদি এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে তার প্রভাব পড়বে পুরো রাজস্ব ব্যবস্থার ওপর। কর আহরণ ব্যাহত হওয়া, টার্গেট পূরণে ব্যর্থতা এবং করদাতাদের আস্থার সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিসিএস ট্যাকসেশন অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি প্রভাবশালী সংগঠন, যারা দীর্ঘদিন ধরে কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে আসছে। এই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত হওয়া মানে শুধু একটি সংগঠন নয়—সমগ্র কর প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও এখন এক অনিশ্চিত পথে প্রবেশ করছে।
বাংলাবার্তা/এসজে