
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেননি, নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম করেননি, বরং আড়ালে-আবডালে সহযোগিতা করেছেন—এমন ব্যক্তিদের বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে কোনো আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৭ মে) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউরীস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় উদ্যোগে আয়োজিত “সদস্য নবায়ন” ও “সদস্য সংগ্রহ” কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, “আমরা এমন একটি সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যখন দেশের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপির সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দীর্ঘদিন পর আমাদের সামনে সংগঠন পুনর্গঠনের এমন সুযোগ এসেছে। এটি কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ইউনিটকে মাঠপর্যায়ে গিয়ে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সদস্য সংগ্রহ বা নবায়নের সময় আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে—কাউকে গোপনে সদস্য করা যাবে না। প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে, জনসমক্ষে যোগদান করতে হবে। কেউ যদি রাতের আঁধারে বা গোপনে বিএনপিতে আসে, তাহলে সেটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে বিএনপিতে যোগ দিতে হবে।”
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, “আমরা এমন কাউকে দলে নিতে চাই না, যারা সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বা দুর্নীতিবাজ। এমন ব্যক্তিদের দলে নেওয়া আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। বিশেষ করে তাদের কারণে আমাদের ভোট কমে যাবে। তাই সাবধান থাকতে হবে।”
তবে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন এমন অনেক মানুষও বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও যারা আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম করেনি, বরং অনেক সময় সহযোগিতা করেছে—তাদের দলে নিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা আমাদের দমন করেছে, গায়েবি মামলা দিয়েছে, হামলা করেছে, গুলি চালিয়েছে—তারা বিএনপির আদর্শ বহন করতে পারে না।”
সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরে আমির খসরু আরও বলেন, “এই অনুষ্ঠানগুলোর প্রচার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। যেন পুরো জাতি দেখে—বিএনপি আজও শক্তিশালী, সংগঠিত এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে আছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সবাই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সর্বাত্মক অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি মূলত একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়—দলটি তার সংগঠনকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে প্রস্তুত, কিন্তু আদর্শ বিচ্যুতি ও অপরাধীদের ঠাঁই এখানে নেই। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকে রাজনৈতিক মত পাল্টে বিএনপিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও রয়েছে শর্ত—তাদের অতীতে বিএনপি বা বিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সেটিই হবে যোগ্যতা নির্ধারণের প্রধান মানদণ্ড।
এই ঘটনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন একটি কৌশলগত পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে—যেখানে বিএনপি ২০২৫-২৬ সালের সম্ভাব্য রাজনৈতিক পুনঃউত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ