
ছবি: সংগৃহীত
থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের রদবদলের সূচনা হলো। এক ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্র ধরে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়লে, পেতংতার্নের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ফোনালাপটি ছিল সাবেক কম্বোডিয়ান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে, যেখানে পেতংতার্ন তাঁকে ‘চাচা’ সম্বোধন করেন এবং এক থাই সামরিক কর্মকর্তার সমালোচনা করেন।
এই ফোনালাপ প্রকাশের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর একাংশ ও রাজতন্ত্রপন্থীদের পক্ষ থেকে পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। আদালতের বিচারে ফোনালাপটি রাষ্ট্রীয় নীতিমালা এবং নিরাপত্তার প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়।
বর্তমানে পেতংতার্নের জায়গায় উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত সাময়িকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তবে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পেতংতার্ন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। তিনি ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছেন। তিনি দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রাও ছিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
সিনাওয়াত্রা পরিবার বহু বছর ধরে থাইল্যান্ডে জনপ্রিয়তা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। থাকসিন ও ইংলাক—দুজনকেই সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এবার একই পরিবারের তৃতীয় সদস্য পেতংতার্নকেও বিচারিকভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো, যা থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শোনা যায়, পেতংতার্ন সাবেক কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করছেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ থাই সামরিক ইউনিটের কর্মকাণ্ডকে “রাষ্ট্রবিরোধী” বলে ইঙ্গিত করছেন। এই বক্তব্য থাই সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজতন্ত্র এবং সেনাবাহিনীর সম্মান নিয়ে স্পর্শকাতর কোনো মন্তব্য থাইল্যান্ডের মতো দেশে শুধু রাজনৈতিক নয়, বিচারিক জটিলতাও ডেকে আনে।
বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো আদালতের এই রায়কে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, “পেতংতার্নকে সরিয়ে সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনীতিকে দুর্বল করার গভীর চক্রান্ত চলছে।”
তবে রাজতন্ত্রপন্থী দলগুলো এবং সামরিক ঘরানার নেতারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলছেন, “এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।”
বিশ্লেষকদের মতে, থাইল্যান্ডে এখন নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পেতংতার্ন আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে তাঁর রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
একটি ফোনালাপের ফাঁস থেকে শুরু করে একটি সম্পূর্ণ সরকার প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া—এই ঘটনা থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনে দিয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি পেতংতার্নের ভাগ্য এখন আদালতের হাতে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে, আর পুরো দেশ তাকিয়ে থাকবে সেই রায়ের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ