
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে মাঠে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব, তার সঙ্গে মাঠের বাইরের নানা বিতর্ক ও সমালোচনার চাপ—সব মিলিয়ে দলের মানসিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। তবু এই চাপে ভাঙা নয়, ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যেই আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে টাইগাররা। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
এই সিরিজের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্বে এক নতুন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে দুর্দান্ত জয়ের স্মৃতি এখনো তরতাজা। তবে সেই সিরিজে দলের দায়িত্বে ছিলেন লিটন দাস, যিনি তখন অধিনায়কত্বে ছিলেন কেবল অস্থায়ীভাবে। এবার তার কাঁধেই দেওয়া হয়েছে স্থায়ী দায়িত্ব, ফলে এই আমিরাত সিরিজ তার জন্য প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিনায়কত্বের পরীক্ষামূলক মঞ্চ।
ভিন্ন এক আবহে লিটনের প্রথম সিরিজ
বাংলাদেশ দলে বহুবার নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘটনা দেখা গেছে। তবে লিটনের অধিনায়কত্ব পাওয়া অনেকটা স্থায়ী প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ব্যাটিং দক্ষতা, মাঠে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতাই তাকে এই দায়িত্বে বসিয়েছে। এবার তিনি নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন অফিশিয়ালি। আর তার অধীনে মাঠে নামছে এক সুসংগঠিত দল, যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি—তাসকিন আহমেদ। চোটের কারণে এই গতি তারকা এবার স্কোয়াডে নেই। এছাড়া বাংলাদেশের আরেক বোলিং স্তম্ভ মোস্তাফিজুর রহমানও পুরো সিরিজে থাকছেন না। আইপিএলের কারণে তিনি কেবল প্রথম ম্যাচ খেলেই ভারতে ফিরে যাবেন। তবে তবুও দল আত্মবিশ্বাসী, কারণ বাকি সদস্যরা একে অন্যকে সামলানোর মতো যথেষ্ট প্রস্তুত ও উপযুক্ত।
শক্তি ও অভিজ্ঞতায় ভরপুর স্কোয়াড
বাংলাদেশ দল যে স্কোয়াড নিয়ে শারজাহ গেছে, সেটিকে বলা চলে প্রায় পূর্ণ শক্তির দল। একঝাঁক তরুণ ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নিয়ে গঠিত এই দল। যারা আছে স্কোয়াডে—তাদের কারও টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতা প্রচুর, আবার কেউ কেউ এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া। দলে রয়েছেন লিটনের মতো অভিজ্ঞ ওপেনার, শেখ মেহেদি হাসানের মতো অলরাউন্ডার, শান্ত, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেনের মতো মিডল অর্ডার ব্যাটাররা, যারা এক-একজন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
উইকেটরক্ষক হিসেবে দলে আছেন জাকের আলী অনিক, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করে জায়গা করে নিয়েছেন। স্পিন বিভাগের দায়িত্বে আছেন রিশাদ হোসেন ও তানভীর ইসলাম। পেস আক্রমণে থাকছেন হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব এবং নবাগত নাহিদ রানা—যাদের সবাইকে ব্যবহার করে ভিন্ন কৌশল সাজাতে পারে বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষ আমিরাত: সতর্ক থাকার বার্তা
সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ব ক্রিকেটে বড় শক্তি নয়, তবে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুবিধা তাদের থাকবে। সেই সঙ্গে এই সিরিজটি তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কেননা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই দুই দল এখন পর্যন্ত মোট তিনবার টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে, এবং প্রতিবারই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০২২ সালে, তখনও জয় নিয়ে ফিরেছিল টাইগাররা। এবার প্রায় তিন বছর পর আবারও মাঠে ফিরছে এই দুই দল, এবং সেই জয়ের ধারা বজায় রাখাই লক্ষ্য বাংলাদেশের।
লিটনের নেতৃত্বে নতুন প্রত্যাশা
অধিনায়ক লিটন দাস নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন এবং প্রস্তুতও। গত সিরিজে তার অধীনে দলের পারফরম্যান্স ইতিবাচক ছিল, আর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আজ শারজাহর ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বড় স্কোর গড়তে চাইবেন তিনি। দলের ব্যাটিং বিভাগে এখন ধারাবাহিকতা আনাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
দলের পক্ষ থেকে জানা গেছে, মাঠের বাইরের বিতর্ক ভুলে সবাই এখন শুধুই ক্রিকেটে মনোযোগী। হেড কোচ চ্যান্ডিকা হাথুরুসিংহেও খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনে ব্যাপক সময় কাটিয়েছেন এবং কৌশলগত প্রস্তুতি নিয়েছেন। দলের ফোকাস এখন একটাই—জয় দিয়ে সিরিজ শুরু।
সিরিজের সূচি
প্রথম টি-টোয়েন্টি: ১৭ মে, শুক্রবার, শারজাহ (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা)
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি: ১৯ মে, রোববার, শারজাহ (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা)
বাংলাদেশের স্কোয়াড একনজরে
লিটন দাস (অধিনায়ক), শেখ মেহেদি হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তানজিম সাকিব, নাহিদ রানা, শরীফুল ইসলাম ও তানভীর ইসলাম।
বাংলাদেশের জন্য এই সিরিজ কেবল জয়-পরাজয়ের নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক পরীক্ষা। শারজাহর মাটিতে জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে চাইবে দল। নতুন অধিনায়ক, নতুন কৌশল ও অনেক সম্ভাবনার এই সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এখন দেখার বিষয়, মাঠে লিটনরা কতটা কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন এবং আমিরাতের বিপক্ষে ধরে রাখতে পারেন কি না নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব।
বাংলাবার্তা/এমএইচ