
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বাজারে সোনার দাম ফের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম স্বর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার (১৭ মে) রাতে তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোনার নতুন মূল্য ঘোষণা করেছে। এই নতুন মূল্য আগামী রোববার (১৮ মে) থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সব থেকে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের সোনার দাম প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধি বাজারে সোনার চাহিদা এবং সরবরাহের জটিলতা, আন্তর্জাতিক স্বর্ণের দাম ওঠানামাসহ স্থানীয় অর্থনীতির অন্যান্য প্রভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এছাড়াও, বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২১ ক্যারেটের সোনার নতুন দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৪ টাকা এবং ঐতিহ্যগত সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৯৭৮ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
বাজুস তাদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম কিছুটা কমে যাওয়ার ফলে সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নতুন দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই মূল্য পরিবর্তন মূলত বাজারের স্থিতিশীলতা ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৫ মে বাজুস সোনার দাম পুনর্মূল্যায়ন করেছিল। সে সময় ২২ ক্যারেটের সোনার দাম প্রতি ভরি ৩ হাজার ৪৫২ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। অর্থাৎ মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে সোনার দাম প্রায় দেড় হাজার টাকারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশে সোনার দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি, রুপার মূল্য ওঠানামা, এবং স্বর্ণের আমদানি সংক্রান্ত নীতিমালা সোনার বাজারকে প্রভাবিত করছে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সোনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে, কারণ সোনা এখনও একটি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এদিকে, দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষে স্বর্ণ ক্রয় করা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন অনেক ক্রেতা।
বাজুসের এই নতুন মূল্য ঘোষণা দেশের স্বর্ণ বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। বাজার পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারের দিকনির্দেশনা এবং দেশের মুদ্রানীতি অনুযায়ী সোনার দামের ওঠানামা অব্যাহত থাকতে পারে।
সোনার এই ওঠানামা দেশের গৃহস্থালি, ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে উৎসব মৌসুম ও বিয়েবাড়ির সময়ে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ে বলে বিবেচনা করলে দাম বৃদ্ধির প্রভাব আরও স্পষ্ট হবে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের নতুন দাম অনুসারে পরিকল্পনা করতে হবে।
সবমিলিয়ে, বাংলাদেশের সোনার বাজারে এই সাম্প্রতিক মূল্য পরিবর্তন দেশের অর্থনীতির একটি সূক্ষ্ম দিকের প্রতিফলন, যা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রভাবের মিলিত ফলাফল হিসেবে দেখা যায়। ভবিষ্যতে সোনার দাম কেমন ওঠানামা করবে, তা বাজারের পাশাপাশি সরকারের নীতিমালা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভরশীল হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ