
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা সরবরাহের বিষয়টি মাইক্রোসফট প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশেষত জিম্মি উদ্ধারে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে এআই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে মাইক্রোসফট দাবি করেছে, তাদের এআই ও ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি গাজায় হামলা চালানো বা নিরীহ নাগরিকদের ক্ষতি করার কোনো প্রমাণ তারা খুঁজে পাননি।
মাইক্রোসফটের করপোরেট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ব্লগ পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়, যা কোম্পানির পক্ষ থেকে গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেসরকারি এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ২০০ গুণ বৃদ্ধি করেছে বলে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য অনুবাদ, বিশ্লেষণ ও যাচাই করার কাজে মাইক্রোসফটের ‘এজিওর’ ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহৃত হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের এআই প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার ভুল টার্গেটিংয়ে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশ্লেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডঃ মোহাম্মদ রাহমান বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তি যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য বিশ্লেষণে সহায়ক হলেও এর নৈতিক ও মানবিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। গোপনীয়তার অভাবে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সেকেন্ডে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।”
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংগঠন ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার কেন্দ্র’-এর এক মুখপাত্র বলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার যতই উন্নত হোক, তা যদি নিরীহ মানুষের জীবনহানি বাড়ায়, তবে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।”
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, কর্মীদের উদ্বেগ এবং সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসায় তারা একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য বাইরের একটি সংস্থা নিয়োগ দিয়েছে। তবে সেই সংস্থার নাম বা তদন্তের বিস্তারিত তারা প্রকাশ করেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা যায় এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত হয়।
মাইক্রোসফট গাজায় ইসরাইলকে জিম্মি উদ্ধার ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে এআই ও ক্লাউড সেবা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে, তবে সরাসরি হামলায় ব্যবহারের প্রমাণ তারা পায়নি। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মাইক্রোসফট একটি স্বাধীন তদন্ত শুরু করেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ