
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস এবং অন্যান্য আর্থিক পাওনা পরিশোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৮ মে (ঈদের আগে) পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব মালিক তাদের শ্রমিকদের বেতন ও পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি গ্রেফতারের মুখেও পড়তে হবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার, ২১ মে, সকালে রাজধানীর সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নৌপথে নিরাপদ ও শৃঙ্খলাযাত্রা নিশ্চিত করতে আয়োজিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে গণমাধ্যমের সামনে এসব তথ্য জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, "ঈদ সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা আগামী ২৮ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতেই হবে। এটি কোনো অনুরোধ নয়, এটি একটি স্পষ্ট নির্দেশনা। যেসব মালিকদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং যারা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ায় ইতোমধ্যে পাঁচজন মালিকের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধেও মামলা প্রক্রিয়াধীন। তারা দেশের বাইরে তো দূরের কথা, ঢাকার বাইরেও যেতে পারবে না। আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারিতে রেখেছি।"
ড. সাখাওয়াত হোসেন স্পষ্ট করে বলেন, "আমরা মালিকদের বলেছি—হয় আপনারা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করুন, না হলে জেল যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এই ঈদে কোনো শ্রমিক যেন তার পাওনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় না পড়ে, সেটাই সরকারের অগ্রাধিকার।"
উপদেষ্টা আরও জানান, ঈদ সামনে রেখে শুধু শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে নয়, নৌপথের যাত্রী নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়েও সরকার তৎপর রয়েছে। এ বছরের ঈদযাত্রায় নৌযানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চে চারজন করে অস্ত্রধারী আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঈদের আগে ও পরে তিন দিন করে—মোট ছয় দিন বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হবে, যাতে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয়।
তিনি বলেন, "ঈদযাত্রা শুধু আনন্দের সময় নয়, এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলার মতো সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার সময়। কোনো যাত্রী যেন হয়রানি বা দুর্ঘটনার শিকার না হন, তার জন্য আমাদের টিম মাঠে থাকবে।"
নৌপরিবহন ও শ্রমখাত দুটোই ঈদের সময় অতিমাত্রায় চাপে থাকে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, "একদিকে শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা, অন্যদিকে তাদের নিরাপদ যাত্রা—দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা সবাইকে বলছি, আইন মেনে চলুন, মানবিক হোন।"
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ নিয়ে বিগত বছরগুলোতেও নানা অভিযোগ থাকলেও এবারের অবস্থান সরকারের দৃষ্টিতে আরও কঠোর। কারণ, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভ বেড়েছে, যা সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজরে এসেছে। শ্রমিকরা ঈদে পরিবার-পরিজনের কাছে যেতে চায় নিশ্চিন্ত মনে। সেই নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে মালিকদের যথাসময়ে দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে বলেই জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
উপদেষ্টা খোলাখুলি ভাষায় বলেন, "আমরা কাউকে ছাড় দেব না। শ্রমিকের রক্ত-ঘামে গড়া মজুরি নিয়ে কারো সঙ্গে আপস করা হবে না।"
অন্যদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যারা ২৮ মে পর্যন্ত সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে। যে কারখানায় পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, এবার ঈদে শুধু নৌপথে নিরাপদ যাত্রা নয়, শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায়ও সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও সুস্পষ্ট। এই অবস্থান বাস্তবায়নে মালিকপক্ষের দায়িত্বশীলতা ও সরকারের নজরদারি—দুয়োই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ