
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্তমান সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ঘিরে ইদানীংকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যমে একের পর এক বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী এসব ভুয়া তথ্যের উৎস চিহ্নিত করেছে এবং ২৪টি নির্দিষ্ট ভুয়া খবরকে ‘ফেক কার্ড’ আকারে আজ বুধবার (২১ মে) বাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছে।
এই ভুয়া তথ্যগুলো শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত ও সুপরিকল্পিত অপপ্রচার, যার কিছু অংশ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ২৪টি 'ফেক কার্ড' বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব ভুয়া তথ্যের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সরাসরি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে। অনেক খবরেই তাকে ঘিরে এমন বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দুর্বল করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতের একটি বাংলা নিউজ পোর্টাল 'আজ-তাক বাংলা' একটি শিরোনামে দাবি করেছে, "প্রাণ বাঁচাতে ভারতের কাছে আশ্রয় চাইছেন ওয়াকার! ভারত কী করবে?"। এই শিরোনাম শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, এটি সরাসরি সেনাবাহিনীর প্রধানের ব্যক্তিগত ও পেশাগত অবস্থান নিয়ে মিথ্যা প্রচার।
আরেকটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম ছিল, "বাংলাদেশের বড় সেনাকর্তাকে সাজা, ওয়াকুর উজ্জামানকে খমতের প্ল্যান করেছিল?", যা সুস্পষ্টভাবে গুজব এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ছড়ানোর প্রয়াস।
শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, ইউটিউবেও ছড়ানো হয়েছে নানা ধরনের অসত্য ভিডিও। কলকাতা নিউজ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওর শিরোনাম ছিল, "ঢাকায় এবার সামরিক শাসন? কোন পথে ওয়াকার উজ জামান?"—যা স্পষ্টভাবে সামরিক হস্তক্ষেপ বা অস্থিতিশীলতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা।
এছাড়াও বাংলাদেশ ও প্রবাসে অবস্থানরত কিছু ইউটিউবার বিভিন্ন মনগড়া ও ভিত্তিহীন উপস্থাপনার মাধ্যমে সেনাপ্রধান ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে গুজব ছড়াচ্ছেন। এই ইউটিউবাররা ভিউ, সাবস্ক্রিপশন এবং মনোযোগ পাওয়ার লোভে অনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন, যা বর্তমানে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফেসবুক পেজে এসব গুজবকে 'ফেক কার্ড' হিসেবে চিহ্নিত করলেও পোস্টে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বা আইনগত পদক্ষেপের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। তবে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, সেনাবাহিনী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং এসব গুজব প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ভুয়া খবর ছড়ানো শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটি পেশাদার ও নিরপেক্ষ বাহিনী হিসেবে পরিচিত, এবং এ ধরনের গুজব সেই ভাবমূর্তিতে আঘাত হানার অপচেষ্টা বলেই বিবেচিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদেশি ও প্রবাসী চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার এই প্রচেষ্টা মূলত রাজনৈতিক বা বৈদেশিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো মহলের পরিকল্পনার অংশ হতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নজর রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো এখন একটি জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাপ্রধানকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার চালানো হলে তা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে না, পুরো জাতির মনোবল ও স্থিতিশীলতাকেও নষ্ট করতে পারে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই গুজব শনাক্ত ও প্রকাশ কার্যক্রম প্রমাণ করে যে বাহিনী এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন এবং জনগণকে সজাগ রাখার চেষ্টা করছে। তবে ভবিষ্যতে এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ