
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার আনন্দ ঘরে ফেরার প্রস্তুতি শুরু হলো আজ থেকে। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি আজ মঙ্গলবার (২১ মে) থেকে শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেল মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষণার ভিত্তিতে ৭ জুনকে ধরে নেওয়া হয়েছে ঈদের সম্ভাব্য তারিখ। সেই হিসেবে ঈদের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট অগ্রিম বিক্রির সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি
সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক অংশীজন সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানান রেলপথ সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। সভায় জানানো হয়, রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি যাত্রার ১০ দিন আগে থেকে শুরু হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ২১ মে থেকে শুরু হয়েছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি। যাত্রীসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য পূর্ব ও পশ্চিম রেলের জন্য বিক্রির সময়সূচি পৃথকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। এতে বিভাজন করে যাত্রীদের চাপ কমিয়ে সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাপূর্ণ টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
ঈদের আগে কোন দিনে কোন দিনের টিকিট বিক্রি
ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের বিক্রির সময়সূচি হলো নিম্নরূপ:
-
২১ মে: ৩১ মে তারিখের টিকিট
-
২২ মে: ১ জুনের টিকিট
-
২৩ মে: ২ জুনের টিকিট
-
২৪ মে: ৩ জুনের টিকিট
-
২৫ মে: ৪ জুনের টিকিট
-
২৬ মে: ৫ জুনের টিকিট
-
২৭ মে: ৬ জুনের টিকিট
এই সময়সূচি অনুসারে ঈদের আগে শেষ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে ২৭ মে।
ঈদের পর ফিরতি যাত্রার টিকিট
ঈদ শেষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে ফেরা যাত্রীদের সুবিধার্থে ফিরতি টিকিটের বিক্রি শুরু হবে ৩০ মে থেকে। ফিরতি টিকিট বিক্রির সূচি হলো:
-
৩০ মে: ৯ জুনের টিকিট
-
৩১ মে: ১০ জুনের টিকিট
-
১ জুন: ১১ জুনের টিকিট
-
২ জুন: ১২ জুনের টিকিট
-
৩ জুন: ১৩ জুনের টিকিট
-
৪ জুন: ১৪ জুনের টিকিট
-
৫ জুন: ১৫ জুনের টিকিট
অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশন ও টিকিট সংগ্রহ
এই পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে: https://railapp.railway.gov.bd। যাত্রীদের প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে একবার, তারপর প্রতিবারের টিকিট সংগ্রহ সহজেই করা যাবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য:
-
পূর্ণ নাম
-
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
-
মোবাইল নম্বর (যেখানে OTP পাঠানো হবে)
-
ইমেইল ঠিকানা
-
জন্মতারিখ এবং ঠিকানা
ওয়েবসাইটের 'রেজিস্ট্রেশন' ট্যাবে ক্লিক করে তথ্য পূরণ করলে মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) আসবে। সেটি দিয়ে যাচাই সম্পন্ন করলে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে। এরপর ইউজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেমে লগইন হয়ে যাবে।
টিকিট কেনার ধাপ
টিকিট সংগ্রহের জন্য লগইন করার পর যাত্রীকে নিম্নলিখিত তথ্য দিতে হবে:
-
ভ্রমণের তারিখ
-
যাত্রা শুরুর স্টেশন
-
গন্তব্য স্টেশন
-
শ্রেণি (স্নিগ্ধা, শোভন, স্লিপার, এসি ইত্যাদি)
'Find Ticket' অপশনে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ট দিনে যাওয়া ট্রেনগুলোর তালিকা, ট্রেন ছাড়ার সময় ও আসনের অবস্থা দেখাবে। সেখান থেকে 'View Seats' বাটনে ক্লিক করে আসন নির্বাচন করতে হবে। এরপর 'Continue Purchase' অপশনে গিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে।
পেমেন্ট ও টিকিট সংগ্রহ
পেমেন্ট করা যাবে ভিসা, মাস্টারকার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) এর মাধ্যমে। পেমেন্ট সফল হলে একটি ই-টিকিট ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড হবে এবং যাত্রীর ইমেইলেও কপি পাঠানো হবে। যাত্রার আগে নিজ নিজ ইমেইল থেকে ই-টিকিট প্রিন্ট করে নিতে হবে, সঙ্গে রাখতে হবে সরকার অনুমোদিত ফটো আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট)।
প্রয়োজনে অনেকে যাত্রার দিন সোর্স স্টেশন থেকে সরাসরি ই-টিকেটের ভিত্তিতে ছাপানো কাগুজে টিকিট সংগ্রহ করতেও পারবেন।
অতিরিক্ত যাত্রী চাপ ও যাত্রীদের পরামর্শ
ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই যাত্রীদের ভোগান্তির খবর সামনে আসে। তবে এবারের পূর্ব প্রস্তুতি ও অনলাইন প্রক্রিয়ার সহজলভ্যতার কারণে অনেকটাই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তা সত্ত্বেও যাত্রাপথে ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগে টিকিট সংগ্রহ, ভ্রমণ তারিখ নিশ্চিতকরণ, সঠিক তথ্য প্রদান এবং সফরপথ সম্পর্কে অবগত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া অনেকে যেহেতু রাস্তাঘাটে যানজটে পড়তে পারেন, তাই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই রেলস্টেশনে উপস্থিত থাকারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এভাবেই শুরু হলো ঈদযাত্রার টিকিট সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে যাত্রীরা এখন প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে চোখ রাখছেন রেলওয়ের ওয়েবসাইটে, যেন মিস না হয় কাঙ্ক্ষিত টিকিট।
বাংলাবার্তা/এমএইচ