
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১১ ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভারতের উত্তরাঞ্চলের তিনটি রাজ্য—হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশে এই গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য, যা দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বৈরিতিপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন করে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি) গৌরব যাদব সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যারা সরাসরি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) এর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল। তারা ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে তা পাকিস্তানে পাচার করছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ।
ডিজিপি যাদব বলেন, পুলিশ গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে, এই দুই ব্যক্তি চলতি মাসের ৬ ও ৭ তারিখ রাতে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে। এই তথ্য ছিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কোনো হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আরও জানান, আটককৃতদের মোবাইল ফোন, মেসেজিং অ্যাপ এবং আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে যে, তারা শত্রু রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নিরাপত্তা তথ্য পাঠিয়েছে।
হরিয়ানায় গত সপ্তাহে আরও এক সন্দেহভাজন নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যিনি পেশায় একজন ভ্রমণ ব্লগার। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, তার ব্লগিং ছিল গুপ্তচরবৃত্তির আড়াল। জানা যায়, তিনি অন্তত দু’বার পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন এবং সে দেশের একটি দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, তিনি তার ভ্রমণের আড়ালে গোপন তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে জড়িত ছিলেন।
উত্তর প্রদেশ থেকে আটক করা হয় আরও সাতজনকে। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই ভিন্ন ভিন্নভাবে আইএসআইয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন, আর্থিক লেনদেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সফরের রেকর্ড ঘেঁটে এই সংযোগের প্রমাণ মিলেছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, আটককৃতদের বিভিন্নভাবে পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত করা হয়েছে। কারো ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা, কারো ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি এবং আবার কারো ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলুব্ধ করা হয়। WhatsApp ও অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হতো।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, এই গুপ্তচরচক্র মূলত ভারতীয় সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ কার্যক্রম, সেনা মোতায়েন, অস্ত্র মজুদের স্থান এবং প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলোর অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করছিল। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছে প্রশাসন।
বর্তমানে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ভারতের রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং আইটি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-কে (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পর যে ধরনের প্রকাশ্য সংঘর্ষ দেখা যায়নি, তার আগমুহূর্তেও গোয়েন্দা লড়াই ছিল অত্যন্ত তীব্র। এবারও তেমনই এক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
ভারতে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১১ নাগরিকের গ্রেফতার শুধু নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুতর বার্তা বহন করছে। এই ঘটনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বপ্ন আবারও সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত সরকার ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ