
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারতের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার মালিক, প্রধান নির্বাহী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে, যারা অবৈধ অভিবাসনে সক্রিয় সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার চক্র ভেঙে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাগুলো সচেতনভাবে অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে জড়িত এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে তারা সহায়তা প্রদান করছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো প্রতিদিনই অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচারকারীদের শনাক্তকরণে কাজ করে যাচ্ছে। কনসুলার অ্যাফেয়ার্স এবং ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি সার্ভিস এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্যই নয়, বরং এটি একটি জোরালো সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে যারা অবৈধ অভিবাসনে জড়িত অথবা সহায়তা প্রদান করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতেও এই ধরনের মানবপাচার চক্র ভেঙে ফেলার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কেবলমাত্র অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে বিদেশিদের সচেতন করাই নয়, যারা এই আইন লঙ্ঘন করে তাদেরও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। এতে অবৈধ অভিবাসনে সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন ও নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অবৈধ অভিবাসন রোধে এমন কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
বিশেষ করে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র সাধারণ ভিসা আবেদনকারীদের জন্য নয়, এমনকি যারা ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় পড়েন, তাদের মধ্যেও প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ, যারা সাধারণত সহজে ভিসা পান, তারাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারেন।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আনেন এবং অবৈধ অভিবাসীদের কঠোরভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ তালিকায় ভারতীয়রাও রয়েছে যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি কয়েকজনকে হাতে ও কোমরে রশি বেঁধে বিমানে তুলে ফেরা হয়েছে। এই কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন তাদের দেশের অভিবাসন নীতিকে শক্তিশালী করছে এবং অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি বাড়াচ্ছে।
মোট কথা, ভারতের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে জোরালো সংকেত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট যে, যারা অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য সহায়তা প্রদান করে, তারা আর যুক্তরাষ্ট্রে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনাটি কেবল ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলোর জন্য নয়, গোটা বিশ্বের ভ্রমণ ও অভিবাসন ক্ষেত্রের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়নের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ