
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য আবারও হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারার মাধ্যমে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। ২০৬ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত এক বল হাতে রেখে ২ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক আমিরাত।
বাংলাদেশ দলের জন্য ম্যাচের শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে দল মিশ্র মনোযোগের সঙ্গে ব্যাটিং করেছিল। বিশেষ করে তানজিদ হাসানের ৩৩ বলের দুর্দান্ত ৫৯ রানের ইনিংস, লিটন দাসের ৩২ বলে ৪০, হৃদয়ের ২৪ বলে ৪৫ রান এবং শেষের দিকে জাকের আলীর ঝড়ো ৬ বলে ১৮ রান ছিল দলের স্কোরবোর্ডে বড় অবদান। ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান করায় বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় পরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুইশোর ওপরে পৌঁছেছিল। এই ইনিংস ছিল বাংলাদেশের ২৪ ম্যাচ পর প্রথমবারের মতো দুইশোর ওপরে যাওয়ার মাইলফলক।
তবে বল হাতে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন পারফরম্যান্স ম্যাচের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। আমিরাতের বোলিংয়ে নজর কাড়ে জাওয়াদউল্লাহ, যিনি মাত্র ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, এবং অভিষিক্ত সগীর পান ২ উইকেট শিকার করেন। তবে মূল বিষয় ছিল আমিরাতের ব্যাটসম্যানদের উদ্বোধনী জুটির ঝড়ো ব্যাটিং। ওয়াসিম ও জুহাইব প্রথম উইকেটে ১০৭ রান যোগ করে ম্যাচে স্বাগতিকদের দাপট ছড়িয়ে দেন। ওয়াসিম ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, ৫২ বলে ৮২ রানের একমাত্র সেঞ্চুরির কাছাকাছি ইনিংস খেলেন। এই সময় বাংলাদেশ মাঠে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস করায় চাপ সামলাতে পারেনি।
ওই উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর স্বাগতিকদের ব্যাটিং কিছুটা কমজোর হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকায় তারা বিপদের সম্মুখীন হয়। এক পর্যায়ে ১১ বল হাতে থাকতে প্রয়োজন ছিল ২৯ রান, যা খুবই কঠিন মনে হচ্ছিল। তবুও সেখানে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় আমিরাত। ম্যাচের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় শেষ ওভারে, যেখানে ১২ রান দরকার ছিল। বাংলাদেশের বোলার তানজিমের বোলিংয়ে একটি ওয়াইড এবং একটি নো বল আমিরাতের পক্ষে পরিস্থিতি সুবিধাজনক করে তোলে। অবশেষে হায়দার আলী মাত্র ২ রানে ম্যাচ জিতিয়ে দেন স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল অনিয়ন্ত্রিত, ডট বলের অভাব, সময়োপযোগী ক্যাচ মিস এবং অতিরিক্ত রান দিতে দিতে তারা নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। শরীফুল ইসলাম ২ উইকেট নিয়েছিলেন, আর রিশাদ ও তানভীর এক করে উইকেট শিকার করেন। কিন্তু তা যথেষ্ট হয়নি।
এই হারের ফলে সিরিজে সমতা ফিরে এসেছে এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামীকাল একই ভেন্যু শারজাহতে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ম্যাচে এই পরাজয়ের পর বাংলাদেশের শিবিরে সিরিজে হারার শঙ্কা প্রবল হয়েছে, যা প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমিরাতের বিরুদ্ধে সিরিজ হারার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ দলের জন্য এখন সময় নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শেষ ম্যাচে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেখানোর। কারণ শেষ ম্যাচে সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ হবে, আর তাতে হার এড়িয়ে যাওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোয়েব মালিকের নেতৃত্বাধীন আমিরাত দল আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের তুমুল লড়াই করতে হবে।
সিরিজের শেষ ম্যাচে দর্শক ও সমর্থকরা আশা করছেন, লিটন-হৃদয়রা তাদের ব্যাটিংয়ে দৃঢ়তা ফিরিয়ে এনে ও বোলাররা যথাযথ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি উন্নত করবেন। তবে এই ম্যাচে যেকোনো ধরনের ভুল বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তাই দৃষ্টি রাখতে হবে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের ওপর।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই সময়টা এক চ্যালেঞ্জিং সময়। আগামী ম্যাচে হার এড়াতে হলে প্রয়োজন কড়াকড়ি ও মনোবলকে একসঙ্গে শক্তিশালী করার। এবারই হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটি দলের জন্য এক নতুন উদ্যমের সূচনা, যেখানে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করে জয় অর্জনের মানসিকতা গড়ে তোলা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ