
ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৬ মে) বাদ জুমা থেকে গণঅনশন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এক বিশাল সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনের পথে হাঁটবেন তারা। শিক্ষকদের একটি অংশও এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরেই ‘অপরিকল্পিত ক্যাম্পাস ব্যবস্থাপনা’, ‘আবাসন সংকট’, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা’, ‘শিক্ষার্থী কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ’সহ মোট চারটি দাবিকে সামনে রেখে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবারও কাকরাইল মসজিদের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় কাকরাইল মোড়ের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন। তিনি বলেন, "আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। আগামীকাল শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে কাকরাইলে সমবেত হবেন এবং বাদ জুমা থেকে গণঅনশন শুরু হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ছাত্রদের ন্যূনতম আবাসন সুবিধা নিশ্চিত না করার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা শুধু দাবি নয়, দায়িত্ববানদের জবাবদিহিতাও চাই।"
চার দফা দাবির মূল বিষয়:
আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত স্থায়ী সমাধান: বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য। ফলে ঢাকার মতো ব্যয়বহুল শহরে শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দ্রুত আবাসন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের বাস্তবায়ন: প্রায় এক দশক আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য জমি বরাদ্দ ও প্রকল্প প্রস্তাবনা গৃহীত হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বারবার তারিখ বদলানো হয়েছে, যা চরম অব্যবস্থাপনার উদাহরণ।
শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও কল্যাণে স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ন: শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তার অভাব, বিশেষ করে রাতে শহীদ মিনার এলাকা ও আশপাশে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার অভিযোগ করেছেন। তারা চান একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর নীতিমালার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা: প্রশাসনের নানা ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চায়। বিশেষ করে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও আবাসন নিয়ে গোপনীয়তা ও সময়ক্ষেপণের বিষয়ে তারা তদন্ত দাবি করেছেন।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, জবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও এই দাবিগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়েছে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, "ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিগুলোর বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। প্রশাসন যদি এখনই সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আন্দোলন আরও বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।"
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এত বড় আন্দোলনের পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বারবার ডাকা সংলাপে দায়িত্বশীলদের উপস্থিতি না থাকায় কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না বলে জানান তারা।
প্রতীকী অনশন নয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার গণঅনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এই লড়াই শুধু জবি’র ছাত্রদের নয়—সমগ্র দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠবে।
শুক্রবার (১৬ মে) কাকরাইল মোড়ে এই আন্দোলনের বড় সমাবেশ ও গণঅনশন শুরু হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ