
ছবি: সংগৃহীত
চলমান উত্তেজনার মধ্যে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের কর্মসূচি একদিনের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) সচিবালয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সচিবের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আলোচনার মধ্য দিয়ে দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস পাওয়ার প্রেক্ষিতে বুধবারের (২৮ মে) জন্য সচিবালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
গত শনিবার (২৪ মে) থেকে শুরু হওয়া সচিবালয়ভিত্তিক এই কর্মবিরতি আন্দোলন চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে মঙ্গলবারে। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যারা মূলত সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ বাতিলের দাবি তুলে ধরছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়, যার ফলে প্রশাসনিক অগ্রগতি ও কাগজপত্র প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় স্থবিরতা।
দাবি আদায়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের সামনে অবস্থান নেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বক্তব্য, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চাকরি নিরাপত্তা, পদোন্নতি ও নিয়োগ কাঠামোতে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘদিনের পেশাগত স্বীকৃতি ও মর্যাদাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
মঙ্গলবার বিকেল ২টা ৪৫ মিনিটে সচিবালয়ের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি প্রতিনিধিত্ব করেন ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, যিনি এই আলোচনার মূল দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিভাগ ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। আলোচনা বেশ গঠনমূলক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং উভয় পক্ষ দাবি-দাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। সচিবরা আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন যে, তাদের দাবির বিষয়টি পরদিন (বুধবার) মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে সকালেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ সচিবালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সভা করেন, যেখানে অংশ নেন অন্তত চারজন সচিব। ওই বৈঠকে আন্দোলনের কারণ ও এর সমাধান খোঁজার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের প্রভাব, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য সংশোধন নিয়ে একটি পর্যালোচনাকারী কমিটি গঠন করা হবে।
এছাড়া আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ভূমি সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বেই পরবর্তীতে সচিবালয়ে এদিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আপাতত একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে আবারও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। আন্দোলনকারীদের মতে, এটি কোনো প্রত্যাহার নয় বরং সরকারকে সময় দেওয়ার একটি কৌশল।
একজন আন্দোলনকারী কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আমাদের দাবিতে অটল। সরকার আলোচনা শুরু করেছে, সেটা ভালো দিক। কিন্তু যদি আমরা দেখি আলোচনা অগ্রগতি পাচ্ছে না বা আমাদের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে, তাহলে আবার আন্দোলনে ফিরবো। এ দাবির পেছনে আমাদের পেশাগত মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ জড়িত।”
চলমান আন্দোলনের ফলে সচিবালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিষ্পত্তি, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন থমকে গেছে। এই অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার উদ্যোগ নেয়া হয়।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের এই আলোচনার প্রেক্ষিতে এখন দেখা যাচ্ছে, সরকার সমঝোতার পথে অগ্রসর হচ্ছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
বুধবার সচিবালয়ের সচিবরা যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করবেন, তখন স্পষ্ট হতে পারে সরকারের অবস্থান। আন্দোলনকারীরা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে।
এই অবস্থায় সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের উদ্বেগ ও কৌতূহল বিরাজ করছে—সরকার কি আদৌ আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার করবে, নাকি নতুন করে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করা হবে?
যদিও একদিনের কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে, তবে সমাধানের পথ এখনও সুস্পষ্ট নয়। আপাতত প্রশাসনিক স্থবিরতা কাটিয়ে সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে, তবে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস যদি বাস্তবে রূপ না নেয়, তাহলে আন্দোলন আবারও জোরদার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ