
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের মাঝখানে নতুন করে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার আওতায় ৭০ দিনের জন্য লড়াই বন্ধ রেখে ধাপে ধাপে জিম্মি মুক্তির পরিকল্পনা ছিল। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও, প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকার। সোমবার (২৬ মে) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হামাসের এক কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতির বদলে হামাস প্রথম পর্যায়ে ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে আরও কয়েকজনকে মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে গাজার বেশ কিছু এলাকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহারও চুক্তির অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিশেষজ্ঞ স্টিভ উইটকফের একটি পরিকল্পনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উইটকফ মার্কিন সংবাদমাধ্যম Axios কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ইসরাইল একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আগে একটি মধ্যবর্তী পর্যায়ের চুক্তি চায়। বর্তমান প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত, এবং এটি একটি সম্ভাবনার জানালা খুলে দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে হামাসের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাব গ্রহণ করে মানবিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজা।”
তবে এমন বক্তব্যের ঠিক বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে ইসরাইল। গোপনীয়তার শর্তে এক ইসরাইলি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “কোনো দায়িত্বশীল সরকার এই ধরনের প্রস্তাব মেনে নিতে পারে না।” এ অবস্থান থেকেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল সরকার। আলজাজিরা টেলিভিশনও এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করে যে, নেতানিয়াহু প্রশাসন প্রস্তাবটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের অবস্থানে কোনো নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধের ভয়াবহতা দিন দিন আরও বাড়ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস হঠাৎ করে ইসরাইলের সীমান্তে হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। ওই ঘটনার পর থেকে টানা অভিযানে নামে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আন্তর্জাতিক চাপে গত ১৯ জানুয়ারি ইসরাইল একবারের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও, মাত্র দুই মাসের মাথায় ১৮ মার্চ থেকে আবারও নতুন করে হামলা শুরু করে তারা।
দ্বিতীয় দফায় চলমান এই সামরিক অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩,৮২২ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১১,০০০ জন। ইসরাইলি বাহিনী এখনো দাবি করছে যে, তারা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বাকি জীবিত জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে থাকা ২৫১ জিম্মির মধ্যে এখনও কমপক্ষে ৩৫ জন জীবিত রয়েছেন।
এর মধ্যেই গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় স্কুলে ২৫ জন নিহত হওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ত্রাণ লুটের অভিযোগে হামাস কর্তৃপক্ষের হাতে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনাও সাম্প্রতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে যুদ্ধবিরতির এ ধরনের প্রস্তাবগুলো আসছে, তবে ইসরাইলের কঠোর অবস্থানের কারণে তা বাস্তবায়ন দূরবর্তী বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামাস প্রস্তাবে সম্মত হলেও, ইসরাইলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে সংকট নিরসনের সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। ফলে গাজা উপত্যকার সাধারণ মানুষদের ওপর যুদ্ধের প্রভাব আরও দীর্ঘস্থায়ী ও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান এই বিতর্ক আগামী দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ