
ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার (পুশইন) ঘটনায় কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এই ঘটনাগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতকে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ১৪তম ডেপুটি জেলার এবং মহিলা কারারক্ষীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সীমান্তে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি নেই। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন তারা যথাযথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এসব নাগরিককে ফেরত পাঠায়, অবৈধভাবে সীমান্তে ঠেলে না দেয়।”
সম্প্রতি সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে অন্তত ২৩ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে ভারতীয় বিএসএফ। এ নিয়ে দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমন পটভূমিতে সরকারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কারা ব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, কারাগারকে একটি পুনর্বাসন ও কর্মমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারাবন্দীদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণ ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, “কারাগারের ভেতরে থেকেই বন্দিরা কাজ করে আয় করতে পারবে, যাতে তারা পরিবারের খরচ চালাতে সক্ষম হয় এবং জেল জীবন শেষে সমাজে স্বাভাবিকভাবে ফিরে যেতে পারে।” তিনি আরও জানান, কারাগারগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করতে উন্নত প্রযুক্তির নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারকে একটি ‘সংস্কারমুখী অন্তর্বর্তী সরকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছি। কারা ব্যবস্থাকে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্গঠন করা হচ্ছে।”
রাজশাহীতে অবস্থানকালে তিনি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং নবনিযুক্ত ডেপুটি জেলারদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। দুদিনের সরকারি সফরে তিনি সোমবার বিকেলে রাজশাহীতে পৌঁছান এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগ ও প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সীমান্তে পুশইনকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে দেখে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
এই ধরনের ঘটনায় আরও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর জোর দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রশাসন আশা করছে, ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ