
ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির মুকুট এবার উঠল কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের মাথায়। এক দশকের আইপিএল ইতিহাসে এতদিন এই রেকর্ড ছিল অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দখলে। কিন্তু চলতি আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন মোস্তাফিজ।
শনিবার (২৪ মে) জয়পুরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ খেলেন মোস্তাফিজ। আইপিএলের এবারের মৌসুমে দিল্লির হয়ে নিজের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচটিতে বল হাতে ছিলেন দারুণ ছন্দে। ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচ করে তুলে নেন মূল্যবান ৩ উইকেট। তার এই পারফরম্যান্সই তাকে পৌঁছে দেয় এক নতুন মাইলফলকে—আইপিএলে এখন বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে সাকিব আল হাসান ছিলেন এই রেকর্ডের মালিক। দীর্ঘদিন ধরে আইপিএলে অংশ নিয়ে ৭০ ইনিংসে ৬৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর মোস্তাফিজ তার ৬৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন মাত্র ৬০ ইনিংসেই, যা সাকিবের চেয়ে ১০ ইনিংস কম। এটা নিঃসন্দেহে একটি বড় কীর্তি, বিশেষ করে একজন বিশেষায়িত বোলার হিসেবে তিনি যা করে দেখিয়েছেন।
ম্যাচের পারফরম্যান্সে ফিরে গেলে দেখা যায়, পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটসম্যানরা প্রথম থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। তবে মোস্তাফিজ তার বৈচিত্র্যপূর্ণ কাটার, স্লোয়ার এবং নিখুঁত ইয়র্কারে তাদের চাপে ফেলেন। যদিও তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও দিল্লি ম্যাচে বোলিং ইউনিট হিসেবে সুবিধা করতে পারেনি। পুরো ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে পাঞ্জাব তোলে ২০৬ রানের বিশাল স্কোর। তবুও মোস্তাফিজ ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম, যিনি বল হাতে দিলেন প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স।
এবারের আসরে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য খেলতে পেরেছেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাকে দেওয়া হয়েছিল এক সপ্তাহের অনাপত্তিপত্র (NOC)। সেই সময়ে দিল্লি তাকে নিয়েছিল ৬ কোটি রুপির বিনিময়ে। এই এক সপ্তাহে তিনি মাঠে নামার সুযোগ পান মাত্র তিনটি ম্যাচে। আর এই তিন ম্যাচেই শিকার করেন ৪টি উইকেট।
দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে তার প্রথম ম্যাচেই বল হাতে নজর কাড়েন তিনি। এরপরের ম্যাচে কিছুটা ব্যতিক্রম থাকলেও শেষ ম্যাচে আবার নিজেকে প্রমাণ করেন। তার বোলিংয়ের বৈচিত্র্য ও অভিজ্ঞতা দিল্লির বোলিং আক্রমণে বাড়তি সুবিধা এনে দিলেও পুরো টুর্নামেন্টে তাকে নিয়মিত সুযোগ না দেওয়ায় কিছুটা হতাশাই প্রকাশ করেন সমর্থকরা।
আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতামূলক আসরে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য জায়গা পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি নিজেদের মেলে ধরাটাও চ্যালেঞ্জের। মোস্তাফিজ বারবার প্রমাণ করেছেন যে তিনি এই মঞ্চে এক জন দক্ষ ও কার্যকর বোলার। তার সেরা সাফল্য ৪/১১ এবং গড় 29.52, যা তাকে আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম ধারাবাহিক বিদেশি পেসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অন্যদিকে, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আইপিএলে বরাবরই ছিলেন দলের ভারসাম্য রক্ষার মূল অংশ। কিন্তু উইকেট নেওয়ার দিক দিয়ে এখন আর শীর্ষে নেই তিনি। সাকিবের সঙ্গে মোস্তাফিজের এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বরাবরই ছিল আগ্রহের বিষয়। এবার সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেলেন মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে সেরা উইকেটশিকারির এই রেকর্ড নিঃসন্দেহে মোস্তাফিজের জন্য এক বড় অর্জন। একইসঙ্গে এটি পরবর্তী প্রজন্মের বোলারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে বিশ্বমঞ্চে নিজের নাম খোদাই করা সম্ভব।
এখন তিনি ফিরে আসছেন জাতীয় দলের দায়িত্বে। আইপিএলে তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্যও আশার বার্তা হয়ে আসবে বলেই বিশ্বাস ক্রিকেট বিশ্লেষকদের। সামনে রয়েছে বিশ্বকাপ, এবং মোস্তাফিজের এই ছন্দ ধরে রাখা দলকে দেবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস।
বাংলাবার্তা/এমএইচ