
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি পুলিশের পরিচয়ে প্রতারণার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্র সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতারকচক্রটি কখনও নিজেদের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফোন করছে, আবার কখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া বার্তা ছড়াচ্ছে। এমনকি ফেসবুক প্রোফাইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ইমো ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টাও করছে তারা।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার নাম, পদবি এবং ছবি ব্যবহার করে প্রতারকচক্র নানা ধরনের মেসেজ বা কল পাঠাচ্ছে। এমনকি সরকারি দায়িত্ব পালনের নামে মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টাও করছে। কিছু ঘটনায় সরাসরি প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।”
কীভাবে প্রতারণা করছে চক্রটি
প্রতারণার ধরনগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ইনামুল হক সাগর বলেন, চক্রটি সাধারণত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ‘আমি অমুক থানার ওসি’ বা ‘আমি ডিবি পুলিশ বলছি’—এমন পরিচয়ে প্রথমে মানুষকে ভয় দেখায়। এরপর নানা ধরনের প্রলোভন বা হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করে। কখনও বলছে, ‘আপনার নামে একটি মামলা হয়েছে, বিষয়টি মীমাংসা করতে হলে এখনই বিকাশে টাকা পাঠান’। আবার কখনও কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ছবি ব্যবহার করে লেখা হচ্ছে, ‘এই নম্বরে জরুরি যোগাযোগ করুন’। এমন বার্তায় সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে ফাঁদে পা দিচ্ছে।
জনগণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ
এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি— কেউ যদি পুলিশের পরিচয়ে ফোন কল, বার্তা বা সামাজিক মাধ্যমে কোনো সন্দেহজনক তথ্য পান, তাহলে অবশ্যই তা যাচাই করে নেবেন। কোনোভাবেই যেন প্রতারকদের ফাঁদে পা না দেন।”
তিনি আরও বলেন, “অফিশিয়াল পুলিশ কার্যক্রম কখনো ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে পরিচালিত হয় না। পুলিশের নির্ধারিত অফিসিয়াল নম্বর ও মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। কেউ যদি সন্দেহভাজন কারও বার্তা বা ফোন পান, সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় বা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হতে পারেন।”
তদন্ত চলছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। কিছু ঘটনায় তদন্তও অনেক দূর এগিয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটসহ সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলো এই চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে।
ইনামুল হক সাগর বলেন, “প্রতারণা প্রতিরোধে সচেতনতা সবচেয়ে বড় শক্তি। মানুষ যত বেশি সচেতন হবে, এই ধরনের অপরাধ তত দ্রুত দমন করা সম্ভব হবে। আমরা চাই, কোনো সাধারণ মানুষ যেন প্রতারণার শিকার না হয়।”
সন্দেহ হলে কী করবেন?
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, কেউ যদি এমন কোনো ফোন বা বার্তা পান যা সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে সেটি যাচাই না করে কোনো আর্থিক লেনদেনে জড়াবেন না। বরং তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন অথবা পুলিশের হটলাইন ৯৯৯–এ ফোন করে পরামর্শ নিন।
পুলিশ জনগণের পাশে রয়েছে
ঘটনার প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দপ্তর আবারও সবাইকে আশ্বস্ত করেছে যে, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জান-মাল রক্ষায় ও সেবাদানে সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনগণকে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ছবি বা বার্তা দেখলে সেটি সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার না করার পরামর্শও দিয়েছে পুলিশ। জনস্বার্থে এই বার্তাটি যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দিতে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ