
ছবি: সংগৃহীত
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের সূচনা হতে যাচ্ছে আজ রোববার (২৫ মে), যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তত ২০ জন প্রভাবশালী নেতা। এই বৈঠককে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট মহলগুলো আন্তঃদলীয় সংলাপ, মতবিনিময় ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে দেখছে।
এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য়। বৈঠক হবে দুই পর্বে—প্রথম দফার বৈঠক শুরু হবে বিকেল ৫টায়, আর দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, "জাতীয় সংলাপের প্রেক্ষাপটে আজকের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মতামত শুনতে আগ্রহী।"
প্রথম দফার বৈঠক: বিকেল ৫টা
বিকেল ৫টায় প্রথম দফায় বৈঠকে বসবেন এমন কিছু নেতা, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে সংস্কার ও নতুন ধারার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। এই দফায় উপস্থিত থাকবেন:
কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম – লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি
মাহমুদুর রহমান মান্না – নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক
সাইফুল হক – বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক
জুনায়েদ সাকী – গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক
হাসনাত কাইয়ুম – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সংগঠক
মুজিবর রহমান মঞ্জু – রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইসলামী ধারার বুদ্ধিজীবী
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম – বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক
খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া – বাসদের নেতা
টিপু বিশ্বাস – রাজনৈতিক কর্মী ও বাম ধারার প্রতিনিধি
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু – বিকল্প ধারার সংগঠক
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন – মধ্যপন্থী রাজনীতির পরিচিত মুখ
এই প্রথম দফার বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ, এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় দফার বৈঠক: সন্ধ্যা ৬টা
পরের বৈঠকটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ এতে অংশ নিচ্ছেন ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতৃবৃন্দ, যারা ইসলামী রাজনীতির মূলধারায় অবস্থান করছেন। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় দফার বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন:
মাওলানা সাদিকুর রহমান – ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিক
মাওলানা রেজাউল করিম – ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির
মাওলানা মামুনুল হক – হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা
মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাদের – বাংলাদেশ খিলাফত আন্দোলনের মহাসচিব
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি – হেফাজতের নেতা
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী – ইসলামী বক্তা ও সংগঠক
নুরুল হক নূর – গণঅধিকার পরিষদের নেতা এবং সাবেক ডাকসু ভিপি
মাওলানা মুসা বিন ইজহার – চট্টগ্রামের প্রভাবশালী আলেম
মুফতি মাওলানা শাখাওয়াত হোসাইন রাযি – ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক
এই দফার বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর ধর্মীয় অনুষঙ্গ, ন্যায়বিচার, ইসলামী মূল্যবোধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের অংশ।
বৈঠকের পটভূমি ও গুরুত্ব
প্রসঙ্গত, এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।” সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক সংলাপ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের ধারাবাহিক সংলাপ আগামী নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে এটি রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
অনেকেই বলছেন, আজকের বৈঠক শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ভবিষ্যতের পথচিত্র নির্ধারণের সূচনালগ্ন।
জাতীয় ঐক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজনীতি?
বিভিন্ন মতাদর্শ, রাজনৈতিক অবস্থান ও ধর্মীয় ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও সকল পক্ষকে এক টেবিলে বসানো—এটি একদিকে যেমন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্ব ও আস্থার প্রমাণ, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিণতির একটি নতুন দিগন্তও উন্মোচন করছে।
আগামী দিনে এই বৈঠকের ভিত্তিতে আরও বড় পরিসরের সংলাপ আয়োজন করা হতে পারে বলে সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ধরনের সংলাপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন পর একটি ইতিবাচক মেরুকরণ ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ