
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার আগমনের প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে যখন সরকারি ছুটি পালন করা হবে, তখন তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী গুরুত্বপূর্ণ খাতের অর্থনৈতিক লেনদেন নির্বিঘ্ন রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় নির্ধারিত কিছু ব্যাংক শাখা সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হবে ৫, ১১ ও ১২ জুন তারিখে। মূলত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, বোনাসসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা সময়মতো পরিশোধ এবং বৈদেশিক লেনদেন নির্বিঘ্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৫ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করে যে, ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির সময় ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি শিল্পাঞ্চল—যেমন ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম এলাকার তৈরি পোশাকশিল্প-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিছু শাখা সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।
এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম দিন, অর্থাৎ ৫ জুন (বৃহস্পতিবার), শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য আর্থিক পাওনা পরিশোধে সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখাগুলোতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লেনদেন চালু থাকবে। তবে লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যাংকগুলো বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এর পাশাপাশি ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার), যেগুলো সরকারি ছুটির দিন, সেসব দিনেও ব্যাংকের নির্ধারিত কিছু শাখা খোলা থাকবে। মূলত ওষুধশিল্পসহ আমদানি ও রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন নির্বিঘ্নে পরিচালনার লক্ষ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই দিনগুলোতেও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লেনদেন চালু থাকবে এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকের অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ছুটির দিনে দায়িত্ব পালনকারী ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ভাতা ও অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা লাভ করবেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঈদের মতো বড় ধর্মীয় উৎসবের সময় তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত লক্ষাধিক শ্রমিকের আর্থিক লেনদেন নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ধরনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও বাস্তববাদী। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে উৎপাদন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বৈদেশিক ক্রেতাদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ এবং সময়মতো লেনদেন সম্পন্ন করাও দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, পোশাকশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এই খাতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মরত থাকায় ঈদের আগে তাদের বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করা শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে অত্যন্ত জরুরি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।
সার্বিকভাবে, ঈদের ছুটির মধ্যেও নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার এই নির্দেশনা দেশের শিল্প ও অর্থনীতির গতি সচল রাখতে কার্যকর অবদান রাখবে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ