
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের প্রথম ধাপে কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রীয়াজ। তবে তিনি একইসঙ্গে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য অর্জন সম্ভব হয়নি, সেসব বিষয়েও জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের কার্যক্রম কেবল ঐক্যমতের বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মতবিরোধ ও মতানৈক্যের জায়গাগুলোও সবার সামনে তুলে ধরা হবে—এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।
রোববার (২৫ মে) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যকার এক বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে ড. আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “প্রথম ধাপের আলোচনায় ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অনেক বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়ে গেছে—যেটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো, এসব মতানৈক্যের জায়গাও আমরা গোপন রাখব না। বরং জনগণের সামনে তুলে ধরব।”
ড. আলী রীয়াজ জানান, প্রথম পর্যায়ে আলোচনার ফলাফল শুধু সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ রাখা হবে না। তিনি বলেন, “এই কমিশন কোনো গোপন কক্ষের আলোচনায় বিশ্বাস করে না। এটা জাতীয় ঐকমত্যের পথ, এবং সেই পথ কেবল ঐক্যমতের মধ্য দিয়ে নয়, মতভেদের মধ্য দিয়েও পরিপূর্ণ হতে পারে। আমরা চাই মানুষ জানুক—কোথায় একমত হয়েছি, কোথায় হতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, এটি সংস্কার ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য কাজ করছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ জন্য সবার অংশগ্রহণ জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই সংস্কার কর্মসূচি টেকসই হবে না।”
ড. রীয়াজ মনে করেন, জাতীয় সনদ তৈরির এই প্রয়াস শুধু সরকারের নয়—এটি জনগণের এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। তিনি বলেন, “এই সুযোগ হয়তো বারবার আসে না। তাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, নিজেদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ইতিবাচক অবদান রাখা। এটা কোনো একক গোষ্ঠীর কাজ নয়, বরং এটি একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ।”
এদিন সুশীল সমাজের নেতারাও বক্তব্য রাখেন। তাঁরা কমিশনের এই স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের আহ্বানকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেসব ইস্যুতে আরও বিস্তৃত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ড. আলী রীয়াজ। তিনি আশাবাদী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মতানৈক্যের জায়গায়ও সেতুবন্ধন তৈরি হবে।
এইভাবে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রয়াসে নতুন মাত্রা যোগ করল কমিশনের এই অবস্থান, যেখানে শুধু একমত হওয়ার বিষয় নয়, বরং মতভেদকেও স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামনে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ