
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে স্বীকৃত লিওনেল মেসি তার দীর্ঘ এবং গৌরবময় ক্যারিয়ারে করেছেন অসংখ্য স্মরণীয় গোল। বাঁ পায়ের জাদু, নিখুঁত ফ্রি-কিক, গোলরক্ষককে বিভ্রান্ত করা ড্রিবল—সব মিলিয়ে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ইতোমধ্যেই ৮৫০টির বেশি গোলের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। কিন্তু এত শত গোলের ভিড়ে একটা গোলকেই নিজের সবচেয়ে প্রিয় বলে বেছে নিলেন মেসি। আর আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেটি তার ট্রেডমার্ক বাঁ পা দিয়ে নয়, বরং হেডে করা একটি গোল!
২০০৯ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। প্রতিপক্ষ ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ভেন্যু ছিল ঐতিহাসিক রোমের অলিম্পিকো স্টেডিয়াম। সেই ফাইনালে দ্বিতীয় গোলটি করে বার্সেলোনাকে এনে দেন ২-০ ব্যবধানের জয় এবং ইউরোপ সেরার মুকুট। মেসির সেই গোলটি এসেছিল ম্যাচের ৭০তম মিনিটে, যখন জাভি হার্নান্দেজের নিখুঁত ক্রস থেকে বক্সের ভেতর প্রায় আকাশ ছুঁয়ে লাফিয়ে উঠে মাথা দিয়ে বল জালে পাঠান তিনি। গোলরক্ষক এডউইন ফন ডার সার তখন চোখের সামনে দিয়ে বল চলে যেতে দেখে আর কিছুই করতে পারেননি।
গোলটি মেসির ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে হয়তো খুব বেশি চোখ ধাঁধানো নয়। দুই দশকের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত তিনি হেডে গোল করেছেন মাত্র ২৮টি। অথচ পা দিয়ে করা অনেক গোলই ছিল আরও বেশি কৌশলী, বেশি দূর থেকে নেওয়া বা প্রতিপক্ষের রক্ষণের জাল ভেদ করে সৃষ্টিশীলতার পরিচায়ক। কিন্তু তারপরও মেসির কাছে ওই হেডে গোলটির গুরুত্ব একেবারেই আলাদা।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ মে) এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, “আমি হয়তো আরও অনেক সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছি, যেগুলোর সৌন্দর্য আলাদা। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হেডে করা গোলটি সবসময় আমার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের। এটি বিশেষ এক মুহূর্ত ছিল।”
এমন প্রশ্ন হঠাৎ করেই কেন করা হলো মেসিকে? এর পেছনে রয়েছে একটি মহৎ উদ্দেশ্য। বিশ্বখ্যাত তুর্কি শিল্পী রেফিক আনাদল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মেসির পছন্দ করা সবচেয়ে প্রিয় গোলের মুহূর্তটি একটি বিশেষ চিত্রকর্মে রূপান্তরিত করবেন। আর সেই চিত্রকর্মটি ২০২৫ সালের ১১ জুন নিউইয়র্কে আয়োজিত একটি নিলামে বিক্রি করা হবে। পুরো অর্থ যাবে জনহিতকর কাজে।
এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে ইন্টার মায়ামি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি দাতব্য প্রকল্প ‘A Goal in Life’-এর অংশ হিসেবে। মেসি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। সেই সূত্রেই এই দাতব্য উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি। মেসি ও রেফিক আনাদল দুজনেই চিত্রকর্মটিতে স্বাক্ষর করবেন। এমনকি এটি নিলামে তোলার পূর্বে আন্তর্জাতিক ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক্সক্লুসিভ প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই দাতব্য উদ্যোগটি কেবল ফুটবলপ্রেমীদের আবেগকে স্পর্শ করছে না, বরং মেসির ক্যারিয়ারের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তকে স্মারক করে রেখে জনকল্যাণে ব্যবহারেরও অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
একজন খেলোয়াড়ের জীবনের প্রিয় মুহূর্তকে স্মরণ করে সেটিকে শিল্পে রূপান্তর করা এবং তা দান করা—এ যেন ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং মানবিকতা একসাথে মিলে যাওয়ার এক দুর্লভ দৃষ্টান্ত। আর মেসির মতো একজন কিংবদন্তি যখন এমন উদ্যোগে অংশ নেন, তখন তা বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীদের কাছেও হয়ে ওঠে গর্বের এক উপলক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ