
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন থেকে আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে দেওয়া হবে না—এমন এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থীকে তাদের অবস্থান স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা বাতিল হয়ে যাবে। এই ঘোষণা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমিউনিটির জন্য এক মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’-এর অনুমোদন বাতিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক প্রকারে ধাক্কা, কারণ এই অনুমোদন ছাড়া হার্ভার্ড আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না এবং তার পাশাপাশি বর্তমানে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে তাদের স্থানান্তর করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের একটি তদন্ত প্রক্রিয়া। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ডের ভর্তি প্রক্রিয়া, পাঠ্যক্রম এবং নিয়োগনীতিসহ নানা দিক নিয়ে বেশ কয়েক দফা তথ্য চেয়েছিল। তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বারবার এসব অনুরোধকে আইনগত ভিত্তিহীন ও স্বশাসনের পরিপন্থি হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তদন্ত এবং তথ্যাদি আদায়ের এই টানাপোড়েনের পর সরকার ওই অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২৭ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী। ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী হার্ভার্ডের একাডেমিক পরিবেশের বৈচিত্র্য এবং গুণগত মানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ভূমিকা শুধুমাত্র পাঠ্যবিষয়ক নয়, বরং বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ও গবেষণায় তাদের অবদানও অপরিসীম। এই শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশে বিরাট ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে ‘প্রতিশোধমূলক’ ও ‘অবৈধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাদের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ তোলার প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষায় বৈচিত্র্য ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উপস্থিতি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধুমাত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক শিক্ষানীতি ও বৈচিত্র্যময় শিক্ষার ওপরও একটি বড় আঘাত হিসেবে পরিগণিত হবে। উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভূমিকা কমে গেলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক জ্ঞানচর্চায় বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
এদিকে, হার্ভার্ড ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে, কারণ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যে ভিসা বা শিক্ষাজীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তাগুলো সম্পন্ন করেছেন।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেকেই এখন দেখছেন, কীভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের গতিপথে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে এবং শিক্ষার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংহতি ও উন্নয়ন প্রভাবিত হয়।
সবমিলিয়ে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত শিক্ষাজীবনেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ও বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্যও গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ