
ছবি: সংগৃহীত
নারীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে জরায়ুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য শুধু সন্তান ধারণের সক্ষমতার সঙ্গেই জড়িত নয়, এটি তার হরমোনের ভারসাম্য, মানসিক সুস্থতা, দৈহিক কর্মক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের মধ্যে যেসব গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা বেড়েই চলেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওডি। এই রোগটি মূলত ডিম্বাশয়ে একাধিক ক্ষুদ্র সিস্ট তৈরির ফলে হয় এবং এতে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মেয়েদের ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে ব্রণ দেখা দেয়, ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, চুল পড়ে এবং সন্তান ধারণের সক্ষমতায়ও ব্যাঘাত ঘটে।
এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে জরায়ু পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাসও রক্ষা করতে হবে নারীদের। অনেক সময় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি কিছু পানীয় শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে, হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং জরায়ুকে স্বাস্থ্যকর রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ঘরোয়া ডিটক্স পানীয় যা জরায়ু সুস্থ রাখে
এমন একটি প্রাকৃতিক পানীয় রয়েছে, যা খুব সহজেই বাসায় বানানো যায় এবং নিয়মিত খেলে জরায়ু পরিষ্কার থাকে ও হরমোন ভারসাম্য বজায় থাকে। এই পানীয় তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় খুব সাধারণ কিছু উপাদান, যেগুলো আমাদের ঘরেই থাকে।
উপকরণ:
১ কাপ পানি
আধা চা চামচ জিরা
আধা চা চামচ জোয়ান
আধা চা চামচ আদা কুচি
আধা চা চামচ ঘি
তৈরির পদ্ধতি:
প্রথমে একটি ছোট কড়াইয়ে আধা চা চামচ ঘি গরম করে নিন। এরপর এতে দিয়ে দিন জিরা, জোয়ান এবং আদা কুচি। এগুলো হালকা ভাজুন যতক্ষণ না এগুলো থেকে একধরনের ঘ্রাণ বের হয় এবং রং হালকা সোনালি হয়ে আসে। এরপর কড়াইয়ে ঢেলে দিন এক কাপ পানি। পানি ফুটতে শুরু করলে আঁচ মাঝারি করে দিন এবং তখন পর্যন্ত ফোটান, যতক্ষণ না পানির পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়ে যায়। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিন। হালকা গরম অবস্থাতেই এই পানীয়টি পান করুন।
কখন খাবেন?
এই পানীয়টি দিনে একবার খাওয়া যেতে পারে। তবে সর্বোত্তম উপকার পেতে হলে সকালে খালি পেটে পান করাই ভালো। কারণ খালি পেটে এটি শরীরে দ্রুত কাজ করে এবং হজমপ্রক্রিয়া ও হরমোন রিসেট করতে সাহায্য করে।
এই পানীয় খেলে যে উপকারগুলো হয়
ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করে: যাদের মাসিক অনিয়মিত বা খুব কম হয়, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। আদা এবং জিরা উভয়ই রক্তচলাচল বাড়ায় ও জরায়ুর সঠিক কার্যক্রমে সহায়তা করে।
পিসিওডি ও সিস্টের বিরুদ্ধে কাজ করে: ডিম্বাশয়ের সিস্ট কমাতে সহায়তা করে এই পানীয়। নিয়মিত খেলে সিস্টের বৃদ্ধির হার ধীর হয় এবং সিস্ট ছোট হতে শুরু করে।
হজমশক্তি বাড়ায়, পেট ফাঁপার সমস্যা কমায়: জোয়ান ও আদা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করে, যা অনেক সময় জরায়ুর চাপ তৈরি করে।
হরমোন ভারসাম্য ঠিক রাখে: জিরা ও আদা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। ফলে শরীর নিজে থেকেই হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারে।
প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে: এই পানীয়টি জরায়ু পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করায় ডিম্বাণু উৎপাদন স্বাভাবিক হয়। ফলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনাও বাড়ে।
সতর্কতা
যদিও এই পানীয়টি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে বা ঘি খেলে সমস্যা হয়, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আবার গর্ভবতী নারীদের জন্য কিছু উপাদান উপযুক্ত না-ও হতে পারে, তাই এই পানীয় খাওয়ার আগে চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
নারীর স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের মধ্যে কিছুটা সময় বের করে নেওয়া দরকার নিজের যত্নে। শুধু চিকিৎসা নয়, দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি। উপরে বর্ণিত ডিটক্স পানীয়টি সেই ছোট উদ্যোগগুলোর একটি, যা দীর্ঘমেয়াদে নারীর জরায়ু ও হরমোন সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর-মন উভয়ই থাকবে সতেজ ও সুস্থ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ