
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতার পরিসর বাড়ানো হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়ায় একটি বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এ সংশোধনের ফলে এখন থেকে আইসিটির আওতাধীন তদন্ত কর্মকর্তারা অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিজ ক্ষমতাবলে গ্রেপ্তার করতে পারবেন, এবং প্রয়োজনে তল্লাশি চালিয়ে আলামত জব্দের কার্যক্রমও পরিচালনা করতে পারবেন।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতে, এতদিন তদন্ত কর্মকর্তাদের এ ধরনের ক্ষমতা ছিল না। ফলে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই, আলামত সংগ্রহ, কিংবা সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে তারা আইনি সীমাবদ্ধতার মুখে পড়তেন। সংশ্লিষ্ট থানার সহায়তা ছাড়া গ্রেপ্তার কিংবা কোনো জায়গায় তল্লাশি চালানো সম্ভব ছিল না।
সরকার এই পরিবর্তন আনতে গিয়ে আইসিটির গঠিত ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালীর নিয়মে আনুষ্ঠানিক সংশোধন এনেছে এবং তা বৃহস্পতিবার (২২ মে) গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
গেজেটে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী গঠিত তদন্ত সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা এখন তদন্তের প্রয়োজনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। সেইসঙ্গে যেকোনো সময়, যে কোনো স্থানে, আদালতের অনুমতি ছাড়াই, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য তল্লাশি ও জব্দ অভিযান পরিচালনা করতে পারবেন।
আইসিটির এক প্রসিকিউটর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এতদিন আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা নিজেরা গ্রেপ্তার কিংবা সরাসরি তল্লাশির মতো অভিযান চালাতে পারতেন না। প্রতিটি পদক্ষেপে অন্য বাহিনীর উপর নির্ভর করতে হতো। এখন তারা তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যে এই পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন, যা তদন্তকে আরও কার্যকর, দ্রুত ও ফলপ্রসূ করে তুলবে।”
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধের মতো সংবেদনশীল ও জটিল অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা আলামত দ্রুত জব্দ না করতে পারলে তা মুছে ফেলা বা নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা হয়। এই ক্ষমতা থাকলে তদন্ত কর্মকর্তারা আরও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন আইসিটির অধীনে থাকা বিচারিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে, তেমনি তদন্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি এবং পেশাগত দক্ষতার উপরও গুরুত্ব বাড়বে।
তবে এ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও আইনি সীমারেখা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলেও তারা মনে করছেন। কারণ, তদন্ত কর্মকর্তারা যখন সরাসরি গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা পান, তখন তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী নজরদারিও দরকার হয়, যাতে কারো বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার না ঘটে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালে গঠিত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্য সম্পন্ন করার জন্য। তখন থেকে এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে বহু মামলার বিচার হয়েছে এবং বেশ কিছু রায় কার্যকরও করা হয়েছে।
নতুন এই পরিবর্তন ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, গতি সম্পন্ন ও কার্যকর করার দিকেই এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, এই নতুন ক্ষমতা প্রয়োগে তদন্ত কর্মকর্তারা কতটা দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখাতে পারেন এবং এটি বাস্তবিক অর্থে বিচার প্রক্রিয়ার গুণগত মান উন্নয়নে কতটা অবদান রাখে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ