
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির তরুণ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে তার শপথ গ্রহণে বাধা চেয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে আন্দোলনরত কর্মী-সমর্থকদের দাবির সঙ্গে মিল রেখে ইশরাকের শপথ গ্রহণ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সকাল পৌনে ১১টায় বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রায়ের ঘোষণা দেন। আদালতের আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে আর কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা নেই। রিট খারিজের পরপরই তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের জানান, “এখন আর কোনো অজুহাতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বিলম্বিত করা যাবে না। ২৬ মে’র মধ্যে ইশরাককে শপথ না পড়ানো হলে সেটি আদালত অবমাননার শামিল হবে।”
গত আট দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন দাবিতে তারা যমুনা ভবন, মৎস্য ভবন, এবং নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে তারা স্লোগান দেন, “আইনের শাসন চাই”, “নির্বাচিত মেয়রকে দায়িত্ব দাও”।
সমর্থকদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিলম্ব করছে। ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার জন্য তারা ‘প্রশাসনিক বাধা’ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আদালতের নির্দেশনা মেনে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এই আইনি অচলাবস্থার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হচ্ছে কি না, এমন সন্দেহ ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন ইশরাক হোসেন নিজেই। বুধবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমি মেয়র পদের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। কিন্তু প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি নিরপেক্ষতার তোয়াক্কা করছেন না। আমি দাবি জানাচ্ছি—স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।”
তিনি বলেন, “এই দুই উপদেষ্টা সরকারের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। যেহেতু আমি একটি বৈধ রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছি, শপথ গ্রহণ বিলম্বিত করার মাধ্যমে তাঁরা আদালতের আদেশ অমান্য করছেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাইকোর্টের রায়ের পর সরকারের ওপর আইনি ও নৈতিক চাপ দুই-ই বাড়ছে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণের সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে এটি আদালত অবমাননার মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারে।
আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “সরকার যদি আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করে, তাহলে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করতে বাধ্য হব। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।”
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিজয়ী একজন মেয়রকে দায়িত্ব না দিয়ে প্রশাসন জনগণের রায়কে অমান্য করছে।
এই রায় এবং আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এখন সবার দৃষ্টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারা আগামী ২৬ মে’র মধ্যে কী পদক্ষেপ নেয়—তা নির্ধারণ করে দেবে শুধু ইশরাক হোসেনের শপথ নয়, বর্তমান সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা এবং রাজনৈতিক সহনশীলতারও একটি বড় পরীক্ষা।
বহুল প্রতীক্ষিত শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে এখন শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে—‘আর কত দেরি?’
বাংলাবার্তা/এমএইচ