
ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালে প্রণীত ও ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অবশেষে রহিত করা হয়েছে। তবে সেই সঙ্গে আইনটির নয়টি ধারা বলবৎ রাখা হয়েছে একটি নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে। বুধবার (২১ মে ২০২৫) তারিখে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ রহিতকরণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে। এর মাধ্যমে পুরনো আইনটি কার্যকরভাবে বাতিল হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা এখনও বলবৎ থাকছে।
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাতিল, কিন্তু কিছু ধারা বহাল
নতুন অধ্যাদেশটি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরে প্রকাশ করা হয়। অধ্যাদেশ নম্বর ২৫, ২০২৫ শিরোনামে প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ২১ মে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সাইবার সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান, সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন, বিচার এবং আনুষঙ্গিক বিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি নতুন আইনি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে পুরনো আইনটি পুরোপুরি বাতিল না করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বলবৎ রাখা হয়েছে।
কোন কোন ধারা রয়ে গেছে?
সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩, ৩০, ৩২ এবং ৩৫ ধারাসমূহ বলবৎ থাকবে। যদিও পুরো আইন বাতিল করা হয়েছে, এই ধারাগুলো সংরক্ষণ করার অর্থ হলো—এই অংশগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারিক ব্যবস্থার জন্য এখনো কার্যকর থাকবে এবং প্রয়োজনে প্রয়োগ করা যাবে।
এই ধারাগুলোর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেমন:
ধারা ১৭-২০: সাধারণত সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অপরাধ নির্ধারণ ও সাজার বিধান প্রদান করে।
ধারা ২২-২৩: ডিজিটাল তথ্যের নিরাপত্তা এবং অপরাধ প্রমাণের পদ্ধতি নির্ধারণ করে।
ধারা ৩০ ও ৩২: বিচারিক ও তদন্ত সংক্রান্ত বিধান।
ধারা ৩৫: আইনের প্রয়োগের ব্যাখ্যা ও সীমা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
আইনের রহিতকরণ: বিতর্ক ও চাপের ফলাফল?
সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যমকর্মী, প্রযুক্তিবিদ এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। অভিযোগ ছিল, এই আইনটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। অনেকেই একে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর একটি “নতুন সংস্করণ” বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনটির কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়নের পর শেষ পর্যন্ত এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আইনটির কিছু ধারা রাখা হয়েছে ভবিষ্যতের সাইবার আইন কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।
নতুন আইন আসছে কি?
সরকারের আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রযুক্তিগত বাস্তবতা—সবকিছু বিবেচনায় রেখে আইন প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে।
তবে নতুন আইনের খসড়া কিংবা সময়সীমা সম্পর্কে এখনো সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে একটি নতুন সাইবার আইন বিল আকারে উপস্থাপন করা হতে পারে।
এইভাবে ২০২৩ সালের বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন কার্যত বিলুপ্ত হলো। তবে সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিচার ও সুরক্ষা বিধানের জন্য যেসব ধারা প্রয়োজন, সেগুলো কিছুটা সময়ের জন্য বলবৎ রেখে ভবিষ্যতের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ আইন তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে সরকার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ