
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের ঢাকা ছাড়ার মহাযাত্রা। এই যাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে হাতে নিয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) থেকে ঈদের দ্বিতীয় দিনের (১ জুন) ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। টিকিট বিক্রি হবে শতভাগ অনলাইনে, যা কিনা ডিজিটাল সেবায় আরেক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রেলওয়ের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আজ সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোর টিকিট এবং দুপুর ২টা থেকে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ঈদের আগে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩১৫টি। এই বিশাল যাত্রীচাপ সামাল দিতে রেলওয়ে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন তারিখের টিকিট বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।
রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ঈদের আগে ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত মোট সাতদিনের ট্রেন টিকিট বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ৩১ মে’র টিকিট বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে ২১ মে। আজ ১ জুনের টিকিট বিক্রি হলেও, পরবর্তী দিনগুলোতে ২ জুনের টিকিট বিক্রি হবে ২৩ মে, ৩ জুনের টিকিট ২৪ মে, ৪ জুনের টিকিট ২৫ মে, ৫ জুনের টিকিট ২৬ মে এবং ৬ জুনের টিকিট পাওয়া যাবে ২৭ মে।
টিকিট বিক্রির এই পুরো প্রক্রিয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সুবিধার্থে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, একজন যাত্রী একবারে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই এই টিকিট ফেরত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, একবার টিকিট কিনলে তা বাতিলযোগ্য নয়।
এছাড়া, অনলাইন টিকিট কেনার ক্ষেত্রে যাত্রীদের অবশ্যই নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের নম্বরসহ নিবন্ধন করতে হবে, যা ট্রেন যাত্রার দিন যাচাই করা হবে। ফলে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রেল কর্তৃপক্ষ আগামভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তথ্যভিত্তিক ভুল বা জালিয়াতির চেষ্টা করলে টিকিট বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এদিকে, যাত্রীসাধারণের অনেকেই মনে করছেন, অনলাইনভিত্তিক টিকিট বিক্রির এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ভোগান্তি কমাবে, তেমনি ব্ল্যাক টিকিটিং বা দালালচক্রের দৌরাত্ম্যও হ্রাস পাবে। তবে অনেকে আবার অনলাইন সার্ভারজনিত সমস্যার আশঙ্কাও করছেন, বিশেষ করে টিকিট বিক্রির প্রথম কয়েক ঘণ্টায় প্রচণ্ড চাপ পড়ে সার্ভারে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে ৫০টিরও বেশি আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে। এর পাশাপাশি থাকবে বিশেষ ঈদ ট্রেন সার্ভিস, যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন সম্ভব হয়। অতিরিক্ত যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিভিন্ন রুটে বগি সংযুক্তির প্রস্তুতি নিয়েছে।
সব মিলিয়ে, এবারের ঈদুল আজহার পূর্ব মুহূর্তে ট্রেনযাত্রা যেন নির্বিঘ্ন হয়, সে লক্ষ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যাত্রীদেরও এই যাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহসহ অন্যান্য নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, উন্নত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিনির্ভর টিকিট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এবারের ঈদযাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি সুশৃঙ্খল ও দুশ্চিন্তামুক্ত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ