
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরও এক হতাশার অধ্যায় রচিত হলো মধ্যপ্রাচ্যের মরু শহর শারজায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা থেকে বাঁচলেও শেষ পর্যন্ত সিরিজ হার এড়াতে পারেনি সফরকারী বাংলাদেশ দল। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আমিরাত ৭ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয়, আর বাংলাদেশ দল আবারও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
শারজার ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় আমিরাত। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, সেটি হয়তো অনেকেই কল্পনা করেননি। মাত্র ৮৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে টাইগাররা। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা, মিডল অর্ডারের ভঙ্গুরতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস—সব মিলিয়ে এক করুণ চিত্রই দেখা যায় বাংলাদেশ ইনিংসে।
তবে ইনিংসের শেষ দিকে কিছুটা সাহস জোগান হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম এবং উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলী। বিশেষ করে শেষ ওভারে হাসান মাহমুদের ব্যাট থেকে আসে নাটকীয় ২৬ রান, যা বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও সম্মানজনক সংগ্রহের দিকে এগিয়ে দেয়। হাসান মাহমুদ ১৫ বলে ২৬ ও শরীফুল ৭ বলে ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। দলীয় সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬২ রানে।
এর আগে ওপেনার তানজিদ হাসান কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিলেন। মাত্র ১৮ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংসে তিনি বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর বিদায়ের পরপরই ধস নামে ইনিংসে।
যেখানে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ গড়ে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করেছিল, সেখানে আমিরাতের ব্যাটাররা দেখিয়েছেন পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত আত্মবিশ্বাস। শুরু থেকেই লক্ষ্য পূরণের প্রতি মনোযোগী ছিল তারা। পাওয়ার প্লেতেই ৫০ রান তুলে নেয় স্বাগতিকরা, প্রথম ছয় ওভারে হারায় মাত্র একটি উইকেট—দলনেতা মুহাম্মদ ওয়াসিমকে।
এরপরও রাহুল চোপড়া, আলিশান শারাফু ও আসিফ খান মিলে সহজেই পেরিয়ে যান লক্ষ্যের পথ। তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশি বোলাররা। ম্যাচের শেষ ওভারের আগেই জয় তুলে নেয় আমিরাত। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও ছিলেন না বলার মতো কোনো পারফরমার।
তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেন একটি করে উইকেট নিলেও উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রান আটকে রাখার কাজটিও হয়নি। শরীফুল, হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসানরা ছিলেন বিবর্ণ, তাদের বোলিংয়ে ছিল না আগ্রাসী পরিকল্পনার কোনো ছাপ।
এই পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেকটি কালো অধ্যায় যুক্ত হলো। ইতিহাসে এটি দ্বিতীয়বার, যখন টাইগাররা কোনো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হেরে গেল। এর আগে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, এই জয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাজিত করল। এর আগে তারা ২০২২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিল।
এই সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল নির্বাচন, কৌশল এবং মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। প্রধান ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, তরুণদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং বোলারদের পরিকল্পনাহীনতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে ক্রিকেট অঙ্গনে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরেই এমন পারফরম্যান্সে ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বাড়ছে। ভক্তদের আস্থা হারাচ্ছে দল, সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই ধাক্কা কাটিয়ে দল ঘুরে দাঁড়াবে কবে, কিভাবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই হতাশাজনক অধ্যায়ে প্রয়োজন দৃঢ় সিদ্ধান্ত, অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার সমন্বয়। নইলে সামনে অপেক্ষা করছে আরও বড় বিপর্যয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ