
ছবি: সংগৃহীত
গাজার সংকটপূর্ণ অঞ্চলের মানবিক অবস্থা দিন দিন সংকটময় হয়ে উঠছে, কারণ গাজার জন্য নির্ধারিত হাজার হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক এখনো মিশরের সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রয়েছে। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা এসব ট্রাক গাজার অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ইসরায়েলের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল অধিকাংশ জরুরি ত্রাণ সামগ্রী গাজায় ঢুকতে দেয়নি।
ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ কিছুটা শিথিল করার কথা ঘোষণা করলেও, ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশের ক্ষেত্রে অনুমতির গতি অত্যন্ত ধীর এবং সীমিত। এর ফলে গাজায় মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য খাদ্য, পানি, ওষুধ, এবং জ্বালানি উপকরণ প্রয়োজনীয় মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবিক সংস্থা ও ত্রাণ সংগঠনগুলো বারবার সতর্ক করেছেন যে, গাজার অবরোধ চলতে থাকলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় রোধ করা কঠিন হয়ে উঠবে। তারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে গাজার জন্য যা ত্রাণ সামগ্রী আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো’ অপ্রতুল। এমন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে গাজায় এক প্রকার পূর্ণমাত্রার মানবিক সংকট দেখা দেবে।
আলজাজিরার বরাত দিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে গাজায় দিনে মাত্র ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এটি আগের দিনের তুলনায় ব্যাপকভাবে কম, কারণ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে, যখন ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়নি, তখন গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০টি ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ঢুকত। এই কমতি গাজার মানুষের জীবনযাত্রাকে একেবারে সংকটে ফেলেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি হামলার কারণে কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৬৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানাচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। যারা মৃত্যুদণ্ড হিসেবে ধরা হবে, তাদের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই মৃত্যুর সংখ্যা গাজার ধ্বংসাত্মক অবস্থা এবং চলমান অবরোধের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।
গাজার অবরোধ ও ত্রাণ আটকে রাখার কারণে গাজায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক ঘাটতি জীবনের জন্য এক নাজুক সংকট তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করছে, অবিলম্বে গাজার অবরোধ শিথিল করে মানবিক সাহায্যের প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী এই অবরোধ শুধু গাজার মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং এটি সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। মানবিক সাহায্য বন্ধ থাকলে গাজার পরিস্থিতি আরও সংকটময় হবে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুবার এ নিয়ে আলোচনা হলেও, ইসরায়েল এখনো ত্রাণ প্রবেশে শর্ত আরোপ করে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। মিশর সীমান্তে আটকে থাকা হাজারো ত্রাণবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি মানুষের আকুতি বহন করছে—তবে সাহায্যের পৌঁছনো স্বপ্ন এখনো দূরে। অবরুদ্ধ গাজায় মানবতার চূড়ান্ত সংকট এড়াতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি আন্তর্জাতিক মহল থেকে তীব্রভাবে উচ্চারণ করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ