
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে চিরাচরিত রীতি অনুসরণ করে আবারও বাজারে নতুন টাকা ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণত প্রতি বছর দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার আগে বাজারে নতুন নোটের সরবরাহ দেওয়া হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য থাকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে নতুন টাকার বিনিময়ের চাহিদা পূরণ, বাজারে সচল নগদের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং লেনদেনে নতুন নোটের আবেদনকে সম্মান জানানো।
তবে গত ঈদুল ফিতরে এই রীতিতে ভিন্নতা দেখা গিয়েছিল। সেবার টাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি যুক্ত থাকায় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়নি। ফলে জনগণের মাঝে নতুন নোটের ঘাটতি দেখা দেয় এবং পুরনো নোট নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় কিছুটা অসন্তোষ তৈরি হয়।
২০২৫ সালের ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০, ৫০ এবং ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে এই নোটগুলোতে আর থাকছে না বঙ্গবন্ধুর ছবি। তার পরিবর্তে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রতীকী চিত্র হিসেবে নতুনভাবে ডিজাইন করা ‘জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি’ এবং পূর্বের পরিচিত নকশা স্থান পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরে অবস্থিত দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড—যা সাধারণত টাঁকশাল নামে পরিচিত—ইতিমধ্যে ২০ টাকার নোট ছাপার কাজ প্রায় শেষ করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে এই নোট বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। এরপর ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপাও দ্রুতগতিতে শেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, “নতুন নোটের মধ্যে ২০ টাকার কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর পরের সপ্তাহে হস্তান্তর করা হবে ৫০ এবং ১০০০ টাকার নোট। সব নোট ঈদের আগে পর্যায়ক্রমে বাজারে ছাড়া হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান নিশ্চিত করেছেন যে, ঈদের আগেই এই নতুন নোট বাজারে আসবে এবং সেভাবেই সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “নোট ছাপার কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি, ঈদের ছুটির আগেই এসব নোট সীমিত সংখ্যায় ছাড়তে পারব। তবে কবে কোন নোট বাজারে আসবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিল এবং অন্যান্য আঞ্চলিক অফিসে প্রথম ধাপে এসব নোট সরবরাহ করা হবে। এরপর দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো হবে। তবে এবার চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম পরিমাণে নোট ছাপানো হয়েছে, কারণ নতুন ডিজাইন, নিরাপত্তা ফিচার এবং সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে সংঘটিত রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থনীতি, প্রশাসন এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে নানা পরিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার নতুন মুদ্রায়ও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পরিবর্তে জাতীয় পুনর্গঠনের প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছে ‘জুলাই গ্রাফিতি’—যেটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের এক স্মারক চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নতুন এই নোটে গ্রাফিতির পাশাপাশি পূর্বের চেনা ডিজাইন, যেমন নিরাপত্তা সুতো, জলছাপ, অ্যান্টি-কাউন্টারফিট ফিচার ইত্যাদি বজায় রাখা হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষ যেমন নতুনত্ব পাবে, তেমনি পরিচিত ডিজাইনেও থাকবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ।
ঈদ ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন নোটের প্রতি এক ধরনের আবেগ কাজ করে। উপহার হিসেবে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা ঈদ বাজারে খুচরো লেনদেনের সময় নতুন নোটের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় দেখা যায়, ঈদের আগে নতুন নোট সংগ্রহ করতে সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন।
ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তারা জানান, নতুন নোট শুধু মাত্র আনন্দ বা আনুষ্ঠানিকতার অংশ নয়, এটি অর্থনৈতিক গতিশীলতারও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঈদের বাজারে নগদ লেনদেন বেশি হয় এবং নতুন নোট মানুষকে খরচ করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে সাহায্য করে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদের আগেই বাজারে আসবে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট। এই নোট শুধু ঈদের খুশিতে একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করবে না, বরং এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হবে। অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির মেলবন্ধনে এবারকার ঈদ পাবে এক ভিন্ন মাত্রার ছোঁয়া—যার কেন্দ্রে থাকবে এই নতুন টাকা।
আপনার ঈদ হোক আনন্দময়, নতুন নোটের নতুন রূপে!
বাংলাবার্তা/এমএইচ