
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বাজারে সোনার দাম আবারও তীব্র হারে বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের গহনা ও মূল্যবান ধাতুর বাজারে এক নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ২২ ক্যারেটের সোনার দাম প্রতি ভরি (প্রায় ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২ হাজার ৮২৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে সোনার মূল্য ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে দেশজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার (২১ মে) তাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এই মূল্য বৃদ্ধি ঘোষণা করে। বৈঠকে বাজুসের কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নতুন দাম কার্যকর হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) থেকে এই নতুন সোনার দাম দেশের সব স্বর্ণের দোকান ও বাজারে কার্যকর হবে।
সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ হিসেবে বাজুস উল্লেখ করেছে স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বৃদ্ধি। গত কয়েক দিনের মধ্যে সোনার বাজারে বিশেষত তেজাবী সোনার দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ায়, সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের দফায় গত ১৮ মে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু মাত্র চার দিনের ব্যবধানে আবার নতুন করে দাম বাড়ানোতে স্পষ্ট হয় যে বাজারে সোনার চাহিদা ও সরবরাহের অনিয়ম এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের বাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট সোনার প্রতি ভরি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২ হাজার ৮২৩ টাকা এবং এখন এটি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকায়। পাশাপাশি, ২১ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ২ হাজার ৬৯৫ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬২ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ২ হাজার ৩০৯ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখ ৩৯ হাজার ২৩ টাকায় উন্নীত হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির সোনার দামও প্রতি ভরি ১ হাজার ৯৭১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ মে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি এক হাজার ৩৬৪ টাকা বাড়ানো হয়েছিল, যা তখন এক লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকা ছিল। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের সোনা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৭১৪ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৯৭৮ টাকা। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য, সোনার দাম বৃদ্ধির বিপরীতে রুপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট রুপার দাম প্রতি ভরি ২ হাজার ৮১১ টাকা, ২১ ক্যারেট রুপার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট রুপার দাম ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোনার দাম বৃদ্ধির এই ধাক্কা সরাসরি প্রভাব ফেলবে গহনা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ওপর। বিশেষ করে বিবাহ, উৎসব এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে স্বর্ণের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা বিপাকে পড়তে পারেন। এদিকে সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক বাজারের ওঠাপড়া, আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারের পরিস্থিতি, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশের গহনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া, দামের দ্রুত ওঠানামা বাজারকে অস্থির করছে, যা গহনা খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সোনার এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিকল্প বিনিয়োগের পথ খুঁজে নিতে অনেকে বাধ্য হবেন।
পরবর্তী সময়ে দেশের আর্থিক বাজার ও বিনিয়োগ খাতে সোনার এই দাম বৃদ্ধির কী প্রভাব পড়বে তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তবে সাময়িকভাবে সোনার দাম বাড়ায় গহনা বাজারে ক্রেতাদের উৎসাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংক্ষেপে, বাংলাদেশের বাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে, যা আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ ও বাজার পরিস্থিতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজুসের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি মূল্য ওঠানামার কারণে সঠিক সময় ও সুযোগে বিনিয়োগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ