
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংঘটিত একটি ভয়াবহ ও হতবাক করা ঘটনায় ইসরাইলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ মে ২০২৫) এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে শহরের অন্যতম নিরাপত্তাসংবেদনশীল এলাকা ক্যাপিটাল জিউইশ জাদুঘরের বাইরে।
ঘটনার সময় দূতাবাসের ওই দুই কর্মী জাদুঘরের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন। ঠিক তখনই অজ্ঞাতপরিচয় এক হামলাকারী অতর্কিতভাবে গুলি চালায় এবং ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তদন্ত চলছে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হামলার উদ্দেশ্য, হামলাকারীর পরিচয় বা গুলিবর্ষণের কারণ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
ঘটনার পরপরই মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েম এক বিবৃতিতে বলেন, “জাদুঘরের কাছে এক হামলায় দুই কর্মীকে অর্থহীনভাবে (সেন্সলেসলি) হত্যা করা হয়েছে। এটি এক ভয়ানক মানবিক বিপর্যয়। আমরা সক্রিয়ভাবে তদন্ত করছি এবং যত দ্রুত সম্ভব এই বিকৃত অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করব।”
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের প্রার্থনা ও সহানুভূতি নিহতদের পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি। এমন নিষ্ঠুরতার কোনো ন্যায্যতা হতে পারে না।”
ক্যাপিটাল জিউইশ জাদুঘর এবং সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠন আমেরিকান জিউইশ কমিটি (AJC) এই হামলার ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
AJC এক বিবৃতিতে জানায়, “আজকের সহিংসতা আমাদের ভীষণভাবে বিধ্বস্ত করেছে। আমরা সম্পূর্ণ হতবাক। এটি একটি অকথ্য ট্র্যাজেডি। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনার জন্য আমরা কঠিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”
সংস্থাটি আরও জানায়, “আমরা এখনও পুলিশের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি। এই মুহূর্তে আমাদের মনোযোগ নিহত কর্মীদের ও তাদের পরিবারের প্রতি নিবদ্ধ।”
ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বিভাগ এবং ফেডারেল তদন্ত সংস্থা (FBI) যৌথভাবে এই হামলার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার পরপরই উত্তর-পশ্চিম ওয়াশিংটনের একটি বিস্তৃত এলাকা সিল করে ফেলা হয় এবং সেখানে জনসাধারণকে প্রবেশ না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি, যিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন, বলেন, “আমি ঘটনাটি নিজ চোখে দেখেছি এবং এটি একেবারে অবিশ্বাস্য এক সহিংসতা। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি এবং যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের দ্রুত চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা হবে।”
বন্ডি আরও বলেন, “এই হামলা শুধু নির্দিষ্ট দুজনের ওপর নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর একটি আঘাত। আমরা এর পূর্ণ জবাব দেব।”
ইসরাইলি দূতাবাসের কর্মীদের লক্ষ্য করে এমন প্রাণঘাতী হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এমন এক সময়ে এই হামলা সংঘটিত হলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সহিংসতা ও উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামলাটি যদি প্রমাণিতভাবে ইসরাইলবিরোধী কোনো উগ্র গোষ্ঠীর পরিকল্পিত কাজ হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলি স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলবে।
এছাড়া, ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরাইল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নানা ধরনের বিক্ষোভ ও সংঘাতের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ হামলা সেই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের মতো একটি উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত শহরের কেন্দ্রে দিনে-দুপুরে এমন একটি প্রাণঘাতী হামলা শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ইসরাইলি দূতাবাসের কর্মীদের গুলি করে হত্যা নিছক একটি অপরাধ নয়—এটি বিশ্বরাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য একটি বার্তা, যার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও নেপথ্য চালকদের চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
তদন্তের ফলাফল এবং হামলার উদ্দেশ্য প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ