
ছবি: সংগৃহীত
দেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হওয়ায় এই সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় জানানো হয়, বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা — দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মূলত একটি স্থানীয় সতর্কতা, যা কোনো ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপের সরাসরি আগমনের পূর্বাভাস নয়, বরং সাময়িক ঝোড়ো হাওয়া ও অস্বাভাবিক সাগর পরিস্থিতির সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দেয়।
তবে এ সতর্ক সংকেত জারি মানে হলো, উপকূলীয় এলাকা ও সাগরে থাকা নৌযানগুলোকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হঠাৎ গভীর মেঘমালাগুলো কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের রূপও নিতে পারে, যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোনো সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি। তবে অতীতে এমন গভীর সঞ্চালনের কারণে অনেক সময় মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যাওয়ার কিংবা নৌ-দুর্ঘটনার নজির রয়েছে।
তাই এবারও সাগরে অবস্থানরত নৌযান, মাছ ধরার ট্রলার, উপকূলীয় ছোট নৌপথ ব্যবহারকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অস্বাভাবিক গরম ও মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই বৃষ্টিপাত ও মেঘমালার পরিবর্তনের সঙ্গে সাগরেও বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে বঙ্গোপসাগরের ওপর নজর রাখছে এবং প্রয়োজন হলে সংকেত আরও বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন এই সতর্ক বার্তা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে পৌঁছে দেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক সময় ট্রলারগুলো গভীর সাগরে অবস্থান করায় তারা সংকেত বুঝতে পারে না বা গুরুত্ব দেয় না।
তবে এবারের সংকেত জারির পর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তী তথ্য বা সংকেত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে তা জানানো হবে। এজন্য সাধারণ জনগণকে টিভি, রেডিও, মোবাইল অ্যাপ ও সরকারি বার্তা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত একটি সাধারণ সতর্কতা হলেও, এটি অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। অতীতে এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ফলে আগাম সতর্কতা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ