
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ সাত মাস—২৩৫ দিন পর অবশেষে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে উইকেটের দেখা পেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ সাকিব আল হাসান। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) চলতি মৌসুমে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই তুলে নিলেন মূল্যবান একটি উইকেট। শুধু তাই নয়, সাকিবের এই উইকেট শিকার ঘিরে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল লাহোর কালান্দার্সের প্লে-অফ স্বপ্ন। করাচি কিংসকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে দারুণ এক জয় ছিনিয়ে নিয়ে দলটি পৌঁছে গেল কোয়ালিফায়ারে।
ফিরেই আলো ছড়ালেন সাকিব
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট মিলিয়ে শেষবার উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। এরপর ইনজুরি ও রাজনীতির মাঠে সক্রিয়তার কারণে দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন তিনি। মাঠে ফিরেই এলিমিনেটর ম্যাচে নিজের জাত চেনালেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
ম্যাচের প্রথমদিকে অবশ্য সাকিবকে ব্যবহার করেননি অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। তবে পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই সপ্তম ওভারে আক্রমণে আসেন সাকিব। সেই ওভারের প্রথম পাঁচ বলে দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। ওভারের শেষ বলেই ছন্দে থাকা ইংলিশ ব্যাটার জেমস ভিন্সকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান সাকিব। এই উইকেটের মাধ্যমেই ২৩৫ দিনের অপেক্ষার অবসান হয় তার।
কেন আর বোলিং পেলেন না সাকিব?
অবশ্য এই এক ওভার বল করিয়েই সাকিবকে তুলে নেন শাহিন। প্রশ্ন উঠেছে, এমন সফল এক ওভারের পর কেন তাকে আবার বল হাতে আনা হয়নি? বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে মূল কারণ সম্ভবত ম্যাচ আপ। করাচির ইনিংসে তখন ক্রিজে ছিলেন বাঁহাতি ডেভিড ওয়ার্নার, যিনি ছিলেন দারুণ ফর্মে। তার বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনার ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেই হয়তো তাকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক।
ওয়ার্নার শেষপর্যন্ত ৪৮ বলে ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। তার বিদায়ের পর কিছুটা হাত খুলে খেলেন ইরফান খান (১৮), খুশদিল শাহ (২৭) ও মোহাম্মদ নবি (১৬)। তাদের ছোট ছোট ইনিংসের জোড়ে করাচি কিংস দাঁড় করায় ১৯০ রানের লড়াকু সংগ্রহ।
ব্যাটিংয়ে নামার দরকারই হয়নি সাকিবের
লাহোর কালান্দার্সের জবাবটা ছিল আরও চমকপ্রদ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ফখর জামান। মাত্র ২৮ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন তরুণ ব্যাটার আব্দুল্লাহ শফিক। ৩৫ বলে ৬৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি, যা লাহোরের জয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়।
মাঝখানে ৩০ রানে ফিরে যান কুশল পেরেরা, তবে ব্যাটিং অর্ডারের নিচে থাকা শ্রীলঙ্কান তারকা ভানুকা রাজাপাকশে মাত্র ১২ বলে ঝড়ো ২৩ রান করে ম্যাচটিকে একপেশে করে দেন। সব মিলিয়ে সাকিবের ব্যাটিংয়ের প্রয়োজনই হয়নি। ব্যাট হাতে সুযোগ না পেলেও বল হাতে তিনি নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন এই ম্যাচে।
বাংলাদেশি আর কেউ?
লাহোরের স্কোয়াডে সাকিব ছাড়া আরও দুই বাংলাদেশি খেলোয়াড় আছেন—রিশাদ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে একাদশে জায়গা পেয়েছেন শুধু সাকিবই। ম্যাচে প্রয়োজনমতো একাদশ সাজাতে গিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যকারিতার নিরিখে তিন স্পিনারের মধ্যে নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে ছিলেন তিনিই।
এখন সামনে ইসলামাবাদ
এই দাপুটে জয়ের ফলে পিএসএল কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিয়েছে লাহোর কালান্দার্স। এখন তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। আগামী শুক্রবার (স্থানীয় সময়) কোয়ালিফায়ার ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। সেই ম্যাচে সাকিবকে দেখা যেতে পারে আরও বড় ভূমিকায়, বিশেষ করে যদি তিনি আরও ওভার বল করার সুযোগ পান এবং প্রয়োজন হয় ব্যাটিংয়েরও।
২৩৫ দিনের প্রতীক্ষা শেষে ফিরে আসা উইকেট যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে—সাকিব এখনও থেমে যাননি। তিনি ফিরেছেন নিজের ছায়া হয়ে, নিজের হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের মিশনে। তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু লাহোর নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্তদের কাছেও আশার নতুন আলো।
বাংলাবার্তা/এমএইচ