
ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর, দেশে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছায়। এই পরিস্থিতিতে প্রাণনাশের আশঙ্কায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৬২৬ জন ব্যক্তি দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন রাজনীতিবিদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।
আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন:
২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
৫ জন বিচারক
১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা
৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য
১২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী
৫১ জন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ও শিশু)
সেনাবাহিনী শুধুমাত্র মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে এই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের প্রাণ রক্ষা করাই ছিল সেনাবাহিনীর মূল উদ্দেশ্য।
আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই স্বেচ্ছায় চলে যান
পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ ব্যক্তি এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই নিজ উদ্যোগে সেখান থেকে চলে যান। তাদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে নির্ধারিত অভিযোগ ও মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়।
সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্ত রাজনীতিবিদের তালিকা
আইএসপিআরের বিবৃতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্ত ২৪ জন রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন:
জুনায়েদ আহমেদ পলক – সাবেক আইসিটি মন্ত্রী
সায়েদুল হক সুমন – তৎকালীন সংসদ সদস্য
শিরীন শারমিন চৌধুরী – সাবেক স্পিকার
নাজমা আকতার – তৎকালীন সংসদ সদস্য
সামসুল হক টুকু – সাবেক ডেপুটি স্পিকার
ছোট মনির – তৎকালীন সংসদ সদস্য
ইকবালুর রহিম – তৎকালীন সংসদ সদস্য
শাজাহান খান – সাবেক সংসদ সদস্য
রাগিবুল আহসান রিপু – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৬
এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৪
এমএ লতিফ – তৎকালীন সংসদ সদস্য
কাজী নাবিল আহমেদ – সাবেক সংসদ সদস্য
তালুকদার আবদুল খালেক – তৎকালীন মেয়র, খুলনা সিটি করপোরেশন
হাবিবুন নাহার – তৎকালীন এমপি, বাগেরহাট-৪
মো. ইকরামুল হক টিটু – তৎকালীন মেয়র
মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী – তৎকালীন মেয়র, সিলেট সিটি করপোরেশন
মো. আবু জাহির – তৎকালীন এমপি, হবিগঞ্জ-৩
জিয়াউর রহমান বিপ্লব – কাউন্সিলর, বরিশাল সিটি করপোরেশন
এসএম রফিউদ্দিন আহমেদ – ওয়ার্ড কাউন্সিলর
এসএম ফয়সাল আহমেদ রানা – ওয়ার্ড কাউন্সিলর
শরিফ কামাল – তৎকালীন চেয়ারম্যান, মিঠামইন উপজেলা
মো. মাহবুব আলম – তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান, মাদারগঞ্জ
সুজন সাত্তার – পিএস টু এমপি
জাকির হাসান – তৎকালীন এসপি, বগুড়া (যদিও প্রশাসনিক পদে ছিলেন, রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত)
আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্তদের বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই দিন ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য ব্যতীত) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতিফলন। তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও প্রতিহিংসা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা প্রয়োজন।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ২৪ জন রাজনীতিবিদের তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে আইএসপিআর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে এনেছে। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ